বানেশ্বর শিব মন্দির
কোচবিহারের বানেশ্বর শিব মন্দির একটি অত্যন্ত প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। এটি কোচবিহার শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে আলিপুরদুয়ার যাওয়ার পথে অবস্থিত।
ইতিহাস ও কিংবদন্তি
বানেশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। একটি জনপ্রিয় বিশ্বাস অনুসারে, দ্বাপরযুগের শেষভাগে অসুররাজ বাণাসুর তার ইষ্টদেবতা শিবকে পাতালপুরীতে স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন এবং শিবলিঙ্গটি বর্তমান স্থানে প্রতিষ্ঠা পায়। অনেকে মনে করেন, রাজার নামানুসারেই এই জায়গার নামকরণ হয়েছে।
তবে, পুরাণ মতে বাণাসুরের তৈরি এই শিব মন্দির ও শিব লিঙ্গ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং গভীর জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণের রাজত্বকালে রাখাল বালকেরা একটি গরু মাটির স্তূপের ওপর দুধ দিতে দেখে শিব লিঙ্গটি খুঁজে পান। তৎকালীন রাজা নরনারায়ণ সেই শিব লিঙ্গ উদ্ধার করে মন্দির তৈরি করেন। বর্তমান মন্দিরটি রাজা নরনারায়ণের উত্তরপুরুষ রাজা প্রাণ নারায়ণ পূর্ণনির্মাণ করেন।


১৮৯৭ সালে একটি ভূমিকম্পে মন্দিরটি পূর্ব দিকে সামান্য হেলে পড়েছিল, এবং আজও মন্দিরটি সেই অবস্থাতেই রয়েছে। বর্তমানে এই মন্দিরের সমস্ত কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট।
সময়সূচী ও প্রবেশ
* দর্শনের সময়: মন্দিরটি প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ভিড় এড়াতে সকাল বা সন্ধ্যার দিকে যাওয়া ভালো।
* প্রবেশ মূল্য: মন্দিরে প্রবেশ করতে কোনো প্রবেশ মূল্য লাগে না, তবে ভক্তরা চাইলে দান করতে পারেন।
আকর্ষণ ও বৈশিষ্ট্য
* মোহন কচ্ছপ: বানেশ্বর শিব মন্দিরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো মন্দির সংলগ্ন শিব দিঘী, যেখানে বহু প্রাচীন কাল থেকেই একদল কচ্ছপের বসবাস। এই কচ্ছপগুলিকে স্থানীয়ভাবে ‘মোহন’
নামে ডাকা হয় এবং ভক্তরা এদেরকে দৈবিক মনে করেন। এই কচ্ছপগুলি দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
* শিব লিঙ্গ: মন্দিরের প্রধান দালান থেকে ১০ ফুট নীচে মন্দিরের গর্ভগৃহে ‘শিব লিঙ্গ’ এবং একটি ‘গৌরীপাট’ রয়েছে।
* ষাঁড়ের মূর্তি: প্রধান মন্দিরের ডানদিকে সিমেন্টের তৈরি একটি ষাঁড়ের মূর্তি রয়েছে।
* শিব ও অর্ধনারীশ্বরের মূর্তি: মন্দিরের উত্তর দিকে একটি টিনের চালাঘরে শিব ও অর্ধনারীশ্বরের মূর্তি রয়েছে।
উৎসব ও বিশেষ আকর্ষণ
* শিব চতুর্দশী: শিব চতুর্দশীতে এই মন্দির চত্বরে সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে, যেখানে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়।
* অন্যান্য উৎসব: শিব চতুর্দশী ছাড়া মন্দিরকে কেন্দ্র করে তেমন বড় উৎসব হয় না, তবে প্রতিদিন ভক্তরা পূজা-অর্চনা করতে আসেন।

কিভাবে এখানে আসবেন
বানেশ্বর শিব মন্দির কোচবিহার শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
* সড়কপথে: কোচবিহার শহর থেকে বাস, অটো বা ট্যাক্সি করে সহজেই বানেশ্বর শিব মন্দিরে পৌঁছানো যায়। এটি ১২এ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসড়কের ওপর অবস্থিত, যা কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার শহরের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে।
* রেলপথে: বানেশ্বর রেলওয়ে স্টেশন এই শহরেই অবস্থিত, তাই ট্রেনেও এখানে আসা সম্ভব। নিকটতম প্রধান রেলওয়ে স্টেশন হলো নিউ কোচবিহার রেলওয়ে স্টেশন।