গজলডোবা (পাখিদের স্বর্গরাজ্য)

গজলডোবা, যা “পাখিদের স্বর্গরাজ্য” নামে পরিচিত, এটি পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ওদলাবাড়ি ব্লকে তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত একটি মনোরম গ্রাম। এটি উত্তরবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে একটি নতুন সংযোজন এবং পক্ষীপ্রেমীদের কাছে এটি একটি বিশেষ আকর্ষণ।
গজলডোবার প্রধান আকর্ষণ
* পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা: প্রতি বছর শীতকালে (নভেম্বরের শেষ থেকে) সাইবেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজের জলাধারে ভিড় জমায়। এটিই গজলডোবার মূল আকর্ষণ।
* পাখির প্রজাতি: এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি যেমন – রুডি শেলডাক (Ruddy Shelduck), রিভার ল্যাপউইং (River Lapwing), কমন রেডশ্যাঙ্ক (Common Redshank), কমন ক্যুট (Common Coot), গ্রেট ক্রেস্টেড গ্রিব (Great Crested Grebe), লেসার হুইসলিং ডাক (Lesser Whistling Duck), গ্রিন-উইংড টিল (Green-winged Teal), পিনটেল (Pintail), প্লোভার (Plover), ওয়াগটেল (Wagtail), স্যান্ডপাইপার (Sandpiper), শ্রাইক, পেলিক্যান, নর্দান
ল্যাপউইং, পচার্ড, টাফটেড ডাক, মারগেঞ্জার, বার-হেডেড গুজ, অসপ্রে, ব্ল্যাক রেড স্টার্ট, কমন গ্রিনশ্যাঙ্ক, প্যাসিফিক গোল্ডেন প্লোভার এবং বিভিন্ন ধরণের গার্ল দেখা যায়।
* প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: গজলডোবার নীল জলাধার, সবুজ বনানী এবং হিমালয়ের পাদদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করে। পরিষ্কার দিনে তিস্তার ওপারে কাঞ্চনজঙ্ঘার রাজকীয় দৃশ্যও দেখা যায়।
* নৌকাবিহার (শিকারা): তিস্তার জলে নৌকাবিহার করে পাখিদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে। ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিকারা ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। এটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
পর্যটন ও সুযোগ-সুবিধা
* ভোরের আলো ট্যুরিজম প্রপার্টি: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে গজলডোবায় “ভোরের আলো” নামে একটি বড় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে পর্যটকদের থাকার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

* পিকনিক স্পট: পরিযায়ী পাখি দেখার পাশাপাশি গজলডোবা উত্তরবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় পিকনিক স্পট হিসেবেও পরিচিত।
* স্থানীয় অর্থনীতি: পরিযায়ী পাখিদের আগমন স্থানীয় নৌকাচালক ও মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকায় বড় পরিবর্তন এনেছে। পর্যটকদের পাখি দেখিয়ে এবং তিস্তার মাছ বিক্রি করে তারা রোজগার করেন।
কিছু সাম্প্রতিক উদ্বেগ
* পাখির সংখ্যা হ্রাস: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিস্তার নাব্যতা কমে যাওয়া এবং পলি জমার কারণে গজলডোবায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে কমেছে। তিস্তা বিপর্যয়ের কারণে জলজ উদ্ভিদ ও মাছের অভাব পাখিদের খাদ্যের সমস্যা তৈরি করেছে। এর ফলে অনেক পাখি অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
* পরিকাঠামোর সমস্যা: তিস্তা ব্যারেজের সেতু সংস্কারের জন্য যান চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটন ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

Google Maps
কিভাবে এখানে আসবেন
* নিকটতম শহর: জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারের ওদলাবাড়ির খুব কাছেই গজলডোবা অবস্থিত।
* শিলিগুড়ি থেকে: শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি করে গজলডোবা পৌঁছাতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় লাগে।
* রেলপথে: নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন বা মালবাজার স্টেশনে নেমে গাড়ি করে গজলডোবা পৌঁছানো যায়।