একলাখী মসজিদ (সমাধি সৌধ)

মালদা জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক স্থান হলো একলাখী সমাধিসৌধ, যা সাধারণত একলাখী মসজিদ নামেই পরিচিত। এটি মালদার পাণ্ডুয়ায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকীর্তি।
একলাখী সমাধিসৌধের ইতিহাস ও তাৎপর্য
জনশ্রুতি অনুসারে, এই সমাধিসৌধ নির্মাণে প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, তাই এর নামকরণ হয়েছে “একলাখী”। এটি বাংলায় একক গম্বুজযুক্ত প্রাচীনতম টিকে থাকা বর্গাকার ভবন। এটি সম্ভবত সুলতান জালালুদ্দিন মুহম্মদ শাহ (রাজা গণেশের পুত্র, যিনি পরে ইসলাম গ্রহণ করেন), তার স্ত্রী এবং পুত্র শামসুদ্দিন আহমদ শাহের সমাধি হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। তবে, সমাধির সঠিক পরিচয় নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে।
এই সৌধটি ১৫ শতকের প্রথম দিকে (আনুমানিক ১৪২৫ সাল) নির্মিত হয়েছিল এবং তৎকালীন বাংলা স্থাপত্যের এক দারুণ নিদর্শন। এর ইটের কাজ, পোড়ামাটির অলঙ্করণ, বাঁকানো কার্নিশ এবং কোণে অষ্টভুজাকার টাওয়ারগুলি বিশেষ আকর্ষণীয়। এটি হিন্দু মন্দির স্থাপত্যের কিছু বৈশিষ্ট্যও ধারণ করে, যেমন প্রবেশদ্বারের বাজু ও সরদলে খোদাই করা দেবমূর্তি, যা ইঙ্গিত করে যে এই অংশগুলি হিন্দু মন্দির থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।সমাধিসৌধের ভেতরে তিনটি পাথরের শবাধার রয়েছে, যা সুলতান, তার স্ত্রী এবং পুত্রের বলে মনে করা হয়। ভেতরের প্রশস্ত প্রকোষ্ঠের কোণে চারটি কুঠুরি আছে, যা কুরআন তেলাওয়াতকারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল বলে মনে করা হয়।


কখন যাবেন?
মালদা এবং এর ঐতিহাসিক স্থানগুলি ঘোরার জন্য নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময়টি আদর্শ। এই সময় আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে। মার্চের পরেই গরম বাড়তে শুরু করে, যা ভ্রমণকে কষ্টকর করতে পারে। মালদা তার আমের জন্যও বিখ্যাত, তাই যদি আমের মরসুমে যান, তাহলে তা উপভোগ করতে ভুলবেন না।
Google Maps
কিভাবে এখানে আসবেন
একলাখী সমাধিসৌধ মালদার পুরাতন মালদা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ১২ নং জাতীয় সড়কের পাশে অবস্থিত।
* ট্রেন: হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গ ও অসমগামী যেকোনো ট্রেনে মালদা যাওয়া যায়। শিয়ালদহ থেকে রাত ১০টা ১৫ মিনিটের গৌড় এক্সপ্রেস একটি ভালো বিকল্প।
* বাস: ধর্মতলা থেকে সরকারি ও বেসরকারি এসি/নন-এসি বাস পাওয়া যায় মালদা যাওয়ার জন্য।
* মালদা থেকে: মালদা স্টেশনে নেমে অটো, টোটো বা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে একলাখী সমাধিসৌধে পৌঁছানো যায়।