রামকেলি

মালদার রামকেলি একটি ঐতিহাসিক ও পবিত্র স্থান, বিশেষ করে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি “গুপ্ত বৃন্দাবন” নামেও পরিচিত। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে বৃন্দাবন যাওয়ার পথে এখানে এসেছিলেন এবং রূপ ও সনাতন গোস্বামীকে দীক্ষা দিয়েছিলেন।

রামকেলি ভ্রমণে আপনি যা যা দেখতে পারেন:

শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু চরণ মন্দির

এটি রামকেলির প্রধান আকর্ষণ। এই মন্দিরের ভেতরে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পদচিহ্ন রয়েছে, যা ভক্তদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এটি সেই স্থান যেখানে চৈতন্য মহাপ্রভু রূপ ও সনাতন গোস্বামীকে দীক্ষা দিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। মন্দিরের পাশে একটি প্রাচীন কদম্ব ও তমাল গাছ রয়েছে, যার নিচে মহাপ্রভু ধ্যান করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে।

মদন মোহন জিউ মন্দির

চরণ মন্দিরের ঠিক পাশেই রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ সহ মদন মোহন জিউ মন্দির অবস্থিত। এটি রূপ ও সনাতন গোস্বামী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

আটটি কুণ্ড

মন্দির চত্বরের চারপাশে আটটি পবিত্র কুণ্ড বা পুকুর রয়েছে। এগুলোর নাম হলো রূপসাগর, শ্যামকুণ্ড, রাধাকুণ্ড, ললিতাকুণ্ড, বিশাখাকুণ্ড, সুরভিকুণ্ড, রঞ্জকুণ্ড এবং ইন্দুলেখাকুণ্ড। এই কুণ্ডগুলোতে স্নান করা পুণ্যজনক বলে মনে করা হয়।

মাতৃ পিণ্ডদান

রামকেলি মেলায় একটি বিশেষ রীতি হলো মাতৃ পিণ্ডদান। সাধারণত হিন্দু ধর্মে পিতৃ পিণ্ডদানের প্রথা প্রচলিত থাকলেও, রামকেলিতে মাতৃ পিণ্ডদানের বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে, যেখানে নারীরা তাদের মাতৃকূলের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করেন। এটি একমাত্র এই রামকেলি মেলাতেই হয়ে থাকে।

রামকেলি মেলা

প্রতি বছর জৈষ্ঠ্য সংক্রান্তিতে (সাধারণত জুন মাসের মাঝামাঝি) শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর আগমন উপলক্ষে এখানে এক বিশাল মেলা বসে, যা ৫০০ বছরেরও বেশি

সময় ধরে চলে আসছে। এই মেলাকে “গুপ্ত বৃন্দাবন মেলা”ও বলা হয়। মেলাটি প্রায় ৭ দিন ধরে চলে এবং দেশ-বিদেশ থেকে বহু ভক্ত ও পর্যটকের সমাগম হয়।

কোথায় থাকবেন?

রামকেলিতে থাকার মতো তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মালদা শহরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিস্ট লজ এবং কিছু ব্যক্তিগত হোটেল রয়েছে, যেখানে আপনি থাকতে পারেন।

ভ্রমণের সেরা সময়

শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) রামকেলি এবং গৌড় ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এই সময়ে আবহাওয়া মনোরম থাকে। যদি রামকেলি মেলা দেখার ইচ্ছা থাকে, তবে জৈষ্ঠ্য সংক্রান্তির সময় (জুন মাসের মাঝামাঝি) যেতে পারেন, যদিও এই সময়ে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকে।

রামকেলি ভ্রমণ আপনাকে শুধু ধর্মীয় শান্তির অনুভূতিই দেবে না, বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথেও পরিচয় করিয়ে দেবে।

কিভাবে এখানে আসবেন

 * ট্রেন: মালদা টাউন রেলওয়ে স্টেশন ভারতের বিভিন্ন প্রধান শহরের সাথে ভালোভাবে সংযুক্ত। হাওড়া থেকে সরাসরি ট্রেনে মালদা টাউন পৌঁছাতে পারেন।

 * সড়কপথ: মালদা শহর থেকে রামকেলির দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। মালদা শহর থেকে ট্যাক্সি, অটো বা টোটো ভাড়া করে রামকেলি যাওয়া যায়।

Google Maps

Scroll to Top