বক্রেশ্বর সতীপীঠ ও উষ্ণ প্রস্রবণ

বক্রেশ্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার একটি বিখ্যাত তীর্থস্থান এবং পর্যটন কেন্দ্র। এটি উষ্ণ প্রস্রবণ এবং সতীপীঠের জন্য পরিচিত।
বক্রেশ্বর ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণ:
* উষ্ণ প্রস্রবণ: বক্রেশ্বরের প্রধান আকর্ষণ হলো এর ১০টি উষ্ণ প্রস্রবণ। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – পাপহরা গঙ্গা, বৈতরণী গঙ্গা, খরকুণ্ড, ভৈরবকুণ্ড, অগ্নিকুণ্ড, দুধকুণ্ড, সূর্যকুণ্ড, শ্বেতগঙ্গা, ব্রহ্মাকুণ্ড এবং অমৃতকুণ্ড। এই কুণ্ডগুলির জলে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকে, যা ঔষধিগুণসম্পন্ন বলে মনে করা হয়। শীতকালে গরম জলে স্নান করার অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা স্নানের ব্যবস্থা আছে।
* বক্রেশ্বর সতীপীঠ: এটি ৫১টি শক্তিপীঠের অন্যতম। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এখানে দেবী সতীর ত্রিনয়ন বা দুই ভ্রুর মধ্যবর্তী অংশ পতিত হয়েছিল। দেবী এখানে দশভূজা রূপে পূজিত হন।

* বক্রনাথ শিব মন্দির: এটি একটি প্রাচীন শিব মন্দির। এখানে অষ্টাবক্র মুনির সাধনক্ষেত্র ছিল বলে মনে করা হয়, এবং তাঁর নামানুসারেই এই স্থানের নাম বক্রেশ্বর হয়েছে। বক্রনাথ ছাড়াও এখানে কুবেরেশ্বর, সিদ্ধেশ্বর, জোতিলিঙ্গেশ্বর, কালারুদ্রশ্বর এবং জম্ভশ্বর নামে আরও পাঁচটি শিবলিঙ্গ রয়েছে।
* মহিষমর্দিনী মন্দির: বক্রেশ্বরে মহিষমর্দিনী দেবীর একটি মন্দিরও রয়েছে।
কোথায় থাকবেন:
বক্রেশ্বরে থাকার জন্য অনেক হোটেল এবং ধর্মশালা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিস্ট লজও আছে। মূল মন্দিরের আশেপাশে থাকার ভালো ব্যবস্থা আছে।
বক্রেশ্বর একটি শান্ত ও আধ্যাত্মিক পরিবেশের সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য একটি দারুণ জায়গা।
ভ্রমণের সেরা সময়:
বক্রেশ্বরে ভ্রমণের সেরা সময় হলো শীতকাল। এই সময়ে উষ্ণ প্রস্রবণে স্নানের আনন্দ উপভোগ করা যায় এবং আবহাওয়াও মনোরম থাকে।
কিছু টিপস:
* মন্দির প্রাঙ্গণ এবং উষ্ণ প্রস্রবণগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
* মন্দিরে অযথা চিৎকার-চেঁচামেচি করবেন না।
* যদি তারাপীঠও ঘুরতে চান, তাহলে বক্রেশ্বর এবং তারাপীঠের জন্য একটি ২ দিন ১ রাতের ট্যুর প্ল্যান করতে পারেন। বক্রেশ্বর থেকে তারাপীঠ খুব বেশি দূরে নয়।

কিভাবে এখানে আসবেন
* রেলপথে:
* নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হলো সিউড়ি (Suri)। কলকাতা থেকে ট্রেনে সিউড়ি এসে সেখান থেকে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে বক্রেশ্বর পৌঁছাতে পারবেন। সিউড়ি থেকে বক্রেশ্বরের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিমি।
* দুবরাজপুর স্টেশন থেকেও বক্রেশ্বর যাওয়া যায়, দূরত্ব প্রায় ১১ কিমি।
* সড়কপথে:
* কলকাতা থেকে সরাসরি বাসে বক্রেশ্বর যাওয়া যায়। ধর্মতলা থেকে বাস পাওয়া যায়।
* গাড়ি নিয়েও যেতে পারবেন।
* অটো, রিকশা বা গাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে দর কষাকষি করে নিন।