কঙ্কালীতলা সতীপীঠ

কঙ্কালীতলা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুরে অবস্থিত একটি অন্যতম সতীপীঠ। এটি একান্ন সতীপীঠের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং লোকবিশ্বাস অনুসারে এটি একান্নপীঠের সর্বশেষ পীঠ। কঙ্কালীতলা শুধুমাত্র একটি তীর্থস্থান নয়, এটি প্রাচীন সংস্কৃতি, পৌরাণিক উপকথা এবং আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য মিলনক্ষেত্র।

পৌরাণিক কাহিনী ও গুরুত্ব

 * দক্ষযজ্ঞ ও সতীর দেহত্যাগ: হিন্দু পুরাণ অনুসারে, দক্ষযজ্ঞে দেবাদিদেব মহাদেবের নিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেবী সতী নিজের দেহত্যাগ করেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিব সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয়ঙ্কর তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন। সৃষ্টির বিনাশ রোধ করতে ভগবান বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ৫১ খণ্ডে বিভক্ত করেন।

 * কাঁকাল বা কটিদেশ পতন: বলা হয়, সতীর কাঁকাল বা কোমরের অংশ এই স্থানে পতিত হয়েছিল। সেই কারণেই এই স্থানের নাম হয়েছে কঙ্কালীতলা।

 * চৈতন্যপীঠ: লোকবিশ্বাস অনুসারে, সতীর কঙ্কাল সর্বশেষ পৃথিবীর বুকে খসে পড়ার পরেই মহাদেবের চৈতন্য ফিরে আসে। তাই এই পীঠকে চৈতন্যপীঠ নামেও অভিহিত করা হয়।

 * দেবগর্ভা ও রুরু ভৈরব: এখানে দেবী দেবগর্ভা (মতান্তরে বেদগর্ভা) নামে পূজিত হন এবং তাঁর ভৈরব হলেন রুরু।

 * কুণ্ড ও অলৌকিকতা: কঙ্কালীতলা মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হলো একটি কুণ্ড। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে, এই কুণ্ডের জলেই মা সতীর কঙ্কাল নিমজ্জিত আছে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, এই কুণ্ডের জল কখনও শুকায় না এবং এর জল পান

করলে দুরারোগ্য ব্যাধি সেরে যায়। এই কুণ্ডের ভেতরে কিছু পাথর রয়েছে, যা প্রায় ২০ বছর অন্তর তুলে পুজো করা হয় এবং তারপর আবার জলে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এই কুণ্ডের সঙ্গে কাশীর মণিকর্ণিকা ঘাটের সরাসরি যোগ আছে বলেও অনেকে বিশ্বাস করেন।

 * তন্ত্র সাধনা: কঙ্কালীতলা গুপ্ত তন্ত্র সাধনার জন্য অত্যন্ত প্রসিদ্ধ একটি স্থান। মন্দিরের পাশেই একটি শ্মশানও রয়েছে।

মন্দির ও পূজার্চনা

 * কঙ্কালীতলা মন্দিরে কোনো দেবী মূর্তি নেই। এখানে একটি বাঁধানো বেদীর ওপর শ্মশানকালীর একটি ছবি স্থাপন করা হয়েছে এবং এই ছবিতেই দেবগর্ভার উদ্দেশ্যে নিত্যপূজা করা হয়।

 * প্রতি বছর কালীপূজা, শিবরাত্রি এবং চৈত্র সংক্রান্তিতে এখানে বিশেষ পূজা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই সময় প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়।

 * মন্দির প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

Google Maps

কিভাবে এখানে আসবেন

কঙ্কালীতলা সতীপীঠ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর-লাভপুর রোডের উপর অবস্থিত। এটি শান্তিনিকেতন থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার এবং বোলপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে।

 * রেলপথে: শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে বোলপুর বা প্রান্তিকগামী ট্রেনে করে আসা যায়। বোলপুর স্টেশন থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার এবং প্রান্তিক স্টেশন থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার। স্টেশন থেকে টোটো বা গাড়ি ভাড়া করে মন্দিরে যাওয়া যায়।

 * সড়কপথে: বোলপুর শহর থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে কঙ্কালীতলায় পৌঁছানো যায়।

Scroll to Top