দলমাদল কামান

দলমাদল কামান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক কামান। এটি মল্লভূমের মল্ল রাজবংশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নিদর্শন এবং তাদের বীরত্ব ও পরাক্রমের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

ইতিহাস:

 * দলমাদল কামান, যা ডাল মাদল কামান নামেও পরিচিত, ১৭৪২ সালে মল্লরাজ গোপাল সিংহের আদেশে তৈরি করা হয়েছিল।

 * এটি কামার জগন্নাথ কর্মকার তৈরি করেছিলেন।

 * এই কামানটি ১৭৪২ সালে মারাঠা বর্গী আক্রমণের সময় ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে প্রতিহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল বলে প্রচলিত আছে।

 * জনশ্রুতি অনুসারে, এই সময় মল্লরাজাদের কুলদেবতা স্বয়ং ভগবান মদনমোহন অলৌকিকভাবে এই কামানটি ব্যবহার করে বর্গীদের বিতাড়িত করেছিলেন। এই কিংবদন্তি বিষ্ণুপুরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

অবস্থান:

দলমাদল কামান পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে অবস্থিত। এটি বিষ্ণুপুরের একটি অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।

বৈশিষ্ট্য:

 * নামকরণ: “দলমাদল” নামের অর্থ হলো “দলমর্দন”, অর্থাৎ যে কামান শত্রুদলকে (বর্গীদের) বিনাশ করে।

 * আকার ও ওজন:

   * এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩.৮ মিটার (১২ ফুট ৫ ইঞ্চি)।

   * এর ওজন প্রায় ২৯৬ মণ (প্রায় ১১,৮৪০ কিলোগ্রাম বা ১১২ কুইন্টাল)।

 * নির্মাণশৈলী:

   * ৬৩টি লোহার আংটা বা রিং একসাথে যুক্ত করে কামানটির দেহ তৈরি করা হয়েছিল।

   * এই বিশেষ নির্মাণ কৌশলই কামানটিকে শত শত বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে থাকা সত্ত্বেও মরিচা-মুক্ত রেখেছে, যা বাংলার উন্নত ধাতু শিল্পের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।

   * কামানের মাঝখানে এবং মুখের অংশে এর পরিধি প্রায় ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি এবং পিছনের অংশে প্রায় ৮ ফুট ৩.৫ ইঞ্চি।

 * ব্যবহার: কামানের পিছনে ওপরের অংশে বারুদ ভরার জন্য একটি মুখ রয়েছে। কামান দাগার জন্য “রঞ্জকঘর” নামে একটি ছোট চৌকো খাঁজ ব্যবহার করা হতো, যেখানে বারুদ ভরে আগুন ধরিয়ে কামানটি ছোড়া হতো। কামানের মাঝখানে দুটি লোহার দণ্ড বসানো আছে, যা কামানটিকে দুটি লোহার চাকার সাথে যুক্ত করতে ব্যবহৃত হতো।

দলমাদল কামান কেবল একটি যুদ্ধাস্ত্র নয়, এটি মল্ল রাজাদের শৌর্য এবং বাংলার কারিগরি বিদ্যার এক অনন্য প্রতীক, যা আজও বহু পর্যটককে আকর্ষণ করে।

Google Maps

কিভাবে এখানে আসবেন

কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার জন্য ট্রেন একটি জনপ্রিয় এবং সুবিধাজনক মাধ্যম। বেশ কয়েকটি ট্রেন হাওড়া জংশন (HWH), শালিমার (SHM) এবং সাঁতরাগাছি জংশন (SRC) থেকে বিষ্ণুপুর (VSU) পর্যন্ত চলাচল করে।

 * কিছু জনপ্রিয় ট্রেনের নাম: রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস (Rupashi Bangla Express), অরণ্যক এক্সপ্রেস (Aranyak Express), হাওড়া পুরুলিয়া সুফার এক্সপ্রেস (HWH PRR Suf Exp)।

 * সময়: সাধারণত ট্রেনে যেতে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় লাগে।

 * ভাড়া: ট্রেনের শ্রেণি অনুযায়ী ভাড়া ভিন্ন হতে পারে। যেমন: সেকেন্ড সিটিং (2S) এবং চেয়ার কার (CC) এর জন্য ১০০-৪০০ টাকা এবং স্লিপার ক্লাস (SL) বা এসি ক্লাসের (AC) জন্য ৫০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বাস

কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুরের সরাসরি বাস পরিষেবাও পাওয়া যায়।

 * গন্তব্য: বেশিরভাগ বাস এস্প্লানেড (Esplanade), বাবুঘাট বা করুণাময়ী বাস টার্মিনাস থেকে ছাড়ে এবং বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায়।

 * সময়: বাসে যেতে সাধারণত ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লাগে।

 * ভাড়া: বাসের ধরন (এসি/নন-এসি) অনুযায়ী ভাড়া ১২০ টাকা থেকে শুরু হয়।

 * কিছু বাস পরিষেবা: WBTC (CTC), SBSTC এবং কিছু বেসরকারি বাস পরিষেবা উপলব্ধ।

গাড়ি

আপনি যদি ব্যক্তিগত গাড়ি বা ট্যাক্সি ভাড়া করে যেতে চান, তাহলে এটিও একটি ভালো বিকল্প।

 * দূরত্ব ও সময়: কলকাতার কেন্দ্র থেকে বিষ্ণুপুরের দূরত্ব প্রায় ১৪১ কিমি এবং গাড়িতে যেতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।

 * পথ: সাধারণত গাড়ি দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে (SH 2) হয়ে যায়।

Scroll to Top