পুরুলিয়া জেলার পর্যটন কেন্দ্র গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ

পুরুলিয়া পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সুন্দর একটি জেলা, যা তার রুক্ষ লালমাটি, ছোট-বড় পাহাড়, আর সবুজ প্রকৃতির জন্য বিখ্যাত। এখানে পর্যটকদের জন্য দেখার মতো অনেক আকর্ষণীয় জায়গা আছে। পুরুলিয়া ভ্রমণ করলে আপনি পাবেন পাহাড়, জঙ্গল, জলাধার, এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলির এক অসাধারণ মিশ্রণ।

এখানে পুরুলিয়ার কিছু প্রধান পর্যটন কেন্দ্রের তালিকা দেওয়া হলো:

অযোধ্যা পাহাড়

পুরুলিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হলো অযোধ্যা পাহাড়। এটি প্রকৃতিপ্রেমী এবং ট্রেকিং ভালোবাসেন এমন মানুষদের জন্য আদর্শ। এই পাহাড়ের আশেপাশে রয়েছে একাধিক দর্শনীয় স্থান, যেমন—

 * বামনি জলপ্রপাত: অযোধ্যা পাহাড়ের একটি সুন্দর জলপ্রপাত, যা ট্রেকিং করে দেখতে যেতে হয়।

 * তুরগা জলপ্রপাত: এটিও অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে অবস্থিত একটি মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত।

 * মার্বেল লেক: একটি বিশাল প্রাকৃতিক জলাশয়, যা সবুজে ঘেরা পরিবেশে পিকনিকের জন্য দারুণ জায়গা।

 * ময়ূর পাহাড়: এখান থেকে পুরো অযোধ্যা পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

গড়পঞ্চকোট

এটি পুরুলিয়ার একটি ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে পঞ্চকোট রাজাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গ এবং মন্দিরের অবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই স্থানটি থেকে চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। ইতিহাস এবং প্রকৃতির এক দারুণ মেলবন্ধন এখানে খুঁজে পাওয়া যায়।

বড়ন্তি

শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটাতে চাইলে বড়ন্তি একটি অসাধারণ জায়গা। এখানে একটি সুন্দর লেক এবং তার চারপাশে ছোট ছোট পাহাড় রয়েছে। সূর্যাস্তের সময় এখানকার দৃশ্য খুবই মনোরম হয়। এটি পিকনিকের জন্যও একটি জনপ্রিয় স্থান।

জয়চণ্ডী পাহাড়

পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের কাছে অবস্থিত এই পাহাড়টি বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির শুটিংয়ের জন্য। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার জন্য বেশ কিছু সিঁড়ি রয়েছে, আর উপরে রয়েছে জয়চণ্ডী মাতার মন্দির। ট্রেকিং ভালোবাসেন এমন মানুষেরা এখানে যেতে পারেন।

চড়িদা

পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি ব্লকের এই গ্রামটি ছৌ নাচের মুখোশ তৈরির জন্য বিশ্ববিখ্যাত। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন কীভাবে শিল্পীরা হাতে করে নানা ধরনের মুখোশ তৈরি করেন। এটি পুরুলিয়ার লোকশিল্প ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

মুরগুমা

এটি একটি ছোট গ্রাম, যা মুরগুমা লেকের জন্য পরিচিত। পাহাড় এবং ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই লেকটি খুবই শান্ত ও মনোরম। এখানে পাখিদের কলরব এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

পুরুলিয়া ভ্রমণের সেরা সময়

পুরুলিয়া ভ্রমণের জন্য শীতকাল (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময়ে আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং পলাশ ফুলের উৎসবও দেখা যায়। এছাড়া বসন্তকালে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) পলাশের লাল রঙে পুরো পুরুলিয়া সেজে ওঠে, যা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা দেয়। বর্ষাকালেও (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) পুরুলিয়ার সবুজ প্রকৃতি আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

পুরুলিয়াতে অনেক ভালো থাকার জায়গা রয়েছে, যেমন – হোটেল, রিসর্ট, এবং হোমস্টে। স্থানীয় খাবারের মধ্যে আপনি পাবেন ছোলার ডাল, ঝালমুড়ি, এবং আরও কিছু ঐতিহ্যবাহী পদ। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী ২-৩ দিনের একটি ভ্রমণ পরিকল্পনা করে পুরুলিয়ার সৌন্দর্য

উপভোগ করতে পারেন।

Scroll to Top