ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যটন কেন্দ্র গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ

ঝাড়গ্রাম জেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে যেমন আছে শাল, মহুয়া, পিয়াল আর সোনাঝুরির ঘন জঙ্গল, তেমনি আছে পাহাড়, নদী এবং জলপ্রপাত। সেই সঙ্গে রয়েছে ঐতিহাসিক রাজবাড়ি ও প্রাচীন মন্দির।

ঝাড়গ্রাম জেলার কিছু প্রধান পর্যটন কেন্দ্র নিচে তুলে ধরা হলো:

ঝাড়গ্রাম শহর ও তার আশেপাশে

 * ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি: এটি ঝাড়গ্রামের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ব্রিটিশ ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণে তৈরি এই রাজবাড়িটি ১৯৩১ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। এর একাংশে এখনো মল্লদেব রাজপরিবারের বংশধরেরা বসবাস করেন, আর বাকি অংশটি পর্যটকদের জন্য একটি হেরিটেজ রিসর্টে রূপান্তরিত হয়েছে।

 * জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক: ঝাড়গ্রাম শহরের কাছেই অবস্থিত এই চিড়িয়াখানাটি স্থানীয়ভাবে ডিয়ার পার্ক নামে পরিচিত। এখানে বিভিন্ন ধরনের হরিণ, পাখি, ভাল্লুক, নেকড়ে এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। এটি পরিবার এবং শিশুদের নিয়ে ঘোরার জন্য একটি দারুণ জায়গা।

 * ট্রাইবাল মিউজিয়াম: ঝাড়গ্রামের সমৃদ্ধ আদিবাসী সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে এই জাদুঘরটি অবশ্যই ঘুরে দেখা উচিত। এখানে সাঁওতাল, লোধা, মুণ্ডা, মাহাতো এবং ভূমিজসহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিল্পকর্ম ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে।

 * সাবিত্রী মন্দির: এই মন্দিরটি ঝাড়গ্রামের মল্লদেব রাজবংশের কুলদেবী দেবী সাবিত্রীর মন্দির। এটি ৩৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো একটি মন্দির।

বেলপাহাড়ি অঞ্চল

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বেলপাহাড়ি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে পাহাড়, জঙ্গল এবং ঝরনার এক মন মুগ্ধ করা সমন্বয়।

 * ঘাঘরা জলপ্রপাত: বেলপাহাড়ি থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। এটি কালো পাথরের একটি গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং দেখতে কলসির মতো বলে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘ঘাঘরা’।

 * কাকড়াঝোড়: এটি পাহাড় এবং জঙ্গলের মাঝে লুকিয়ে থাকা একটি গ্রাম। ট্রেকিং এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।

 * খান্দারানী হ্রদ: এটি একটি মনোরম হ্রদ, যা পাখির ছবি তোলার জন্য বিখ্যাত। শীতকালে এখানে প্রচুর পরিযায়ী পাখির আনাগোনা হয়।

 * সাদা পাহাড় (চাতন ডুংরি): বেলপাহাড়ি থেকে কাঁকড়াঝোড় যাওয়ার পথে অবস্থিত এই পাহাড়টির বিশেষত্ব হলো এর ধবধবে সাদা পাথর।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

 * চিল্কিগড় কনক দুর্গা মন্দির: ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ডুলুং নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দিরটি প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো। মন্দিরের কাছেই চিল্কিগড় রাজবাড়ি অবস্থিত। এখানকার পবিত্র বন (Sacred Grove) পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় বায়োডাইভারসিটি হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।

 * কুরুমবেড়া ফোর্ট: এটি একটি প্রাচীন দুর্গ, যা মুঘল আমলে তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এটি ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।

 * ঝিল্লি পাখিরালয়: হাতিবাড়ির কাছে অবস্থিত এই হ্রদটি পরিযায়ী পাখির জন্য একটি স্বর্গরাজ্য। এখানে নৌকা বিহারেরও ব্যবস্থা আছে।

 * গোপীবল্লভপুর: সুবর্ণরেখা নদীর তীরে অবস্থিত এই স্থানটি তার রাধা গোবিন্দ মন্দিরের জন্য পরিচিত। এখানে একটি ইকো-পার্কও রয়েছে।

 * রামেশ্বর মন্দির: প্রায় ৬০০ বছরের পুরোনো এই শিব মন্দিরটি সুবর্ণরেখা নদীর তীরে অবস্থিত। কিংবদন্তী আছে যে, রামচন্দ্র এখানে এই মন্দিরটি

স্থাপন করেছিলেন।

Scroll to Top