ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি

পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম জেলায় অবস্থিত ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, এক অসাধারণ স্থাপত্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত। এটি একসময় ঝাড়গ্রামের রাজা ও জমিদারদের বাসস্থান ছিল। বর্তমানে এটি একটি হেরিটেজ হোটেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা পর্যটকদের জন্য এক বিশেষ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
ইতিহাস:
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িটি ১৯২০ সালে রাজা নরসিংহ মাল্লা দেব বাহাদুরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিল। ওড়িশার স্থাপত্যশৈলী এবং রাজস্থানের দুর্গ-শৈলীর মিশ্রণে এটি তৈরি করা হয়, যা একে এক অনন্য রূপ দেয়। মাল্লা দেব রাজবংশ একসময় মেদিনীপুরের মাল্লাভূম অঞ্চলের জমিদার ছিলেন এবং পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের থেকে রাজা উপাধি পান।

ভ্রমণের সেরা সময়:
ঝাড়গ্রাম ভ্রমণের সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। এই সময়ে আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং ভ্রমণের জন্য আরামদায়ক হয়। গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল-জুন) এখানে খুব গরম থাকে এবং বর্ষাকালে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রচুর বৃষ্টি হয়।
কী দেখবেন:
* রাজবাড়ির স্থাপত্য: রাজবাড়ির স্থাপত্যশৈলী সত্যি মুগ্ধকর। এর দেয়ালের কারুকার্য, সুউচ্চ গম্বুজ এবং প্রবেশদ্বার বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। এটি একসময়কার রাজকীয় জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি।
* হেরিটেজ হোটেল: রাজবাড়ির কিছু অংশ বর্তমানে একটি হেরিটেজ হোটেলে রূপান্তরিত হয়েছে। যদি আপনি এখানে থাকতে চান, তবে আপনি রাজকীয় পরিবেশে থাকার অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। হোটেলের অভ্যন্তরীণ সজ্জা এবং পুরনো আসবাবপত্র আপনাকে অতীতের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
* চারপাশের পরিবেশ: রাজবাড়িটি সবুজ বন এবং শান্ত পরিবেশে ঘেরা। রাজবাড়ির প্রাঙ্গণ এবং আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা বেশ আরামদায়ক।
* ঝাড়গ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান: রাজবাড়ির পাশাপাশি ঝাড়গ্রামের আশেপাশে আরও অনেক আকর্ষণীয় স্থান আছে যা আপনি দেখতে পারেন:
* কঙ্করাজিত মন্দির: ঝাড়গ্রামের একটি বিখ্যাত প্রাচীন মন্দির।
* ডুলুং নদী: এই নদীর পাশে মনোরম সময় কাটানো যায়।
* সবুজ দ্বীপ: পিকনিক করার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
* চিলকিগড় রাজবাড়ি ও কনকদুর্গা মন্দির: ঝাড়গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত।
ভ্রমণ টিপস:
* সকাল সকাল পৌঁছানো: দিনের প্রথম দিকে পৌঁছালে আপনি ভালোভাবে সব কিছু ঘুরে দেখার সময় পাবেন।
* আগে থেকে বুকিং: যদি আপনি হেরিটেজ হোটেলে থাকতে চান, তবে আগে থেকেই বুকিং করা উচিত, বিশেষত পিক সিজনে।
* স্থানীয় খাবার: ঝাড়গ্রামের স্থানীয় বাঙালি খাবারগুলি চেখে দেখতে ভুলবেন না।
* পোশাক: আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে হালকা সুতির পোশাক নিয়ে যান, বিশেষত গরমকালে।
* পানি ও প্রয়োজনীয় জিনিস: নিজের সাথে যথেষ্ট পরিমাণে পানি এবং সানস্ক্রিনের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস রাখুন।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি শুধু একটি দর্শনীয় স্থান নয়, এটি বাংলার এক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি একই সাথে ইতিহাস, স্থাপত্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

Google Maps
কিভাবে এখানে আসবেন
* ট্রেনে: সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হল ট্রেনে যাওয়া। হাওড়া স্টেশন থেকে ঝাড়গ্রামের জন্য নিয়মিত ট্রেন আছে। ট্রেনে প্রায় ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগে। ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে রাজবাড়িটি রিকশা বা টোটোতে সহজেই পৌঁছানো যায়।
* সড়কপথে: কলকাতা থেকে গাড়িতে করে ঝাড়গ্রাম যাওয়া যায়। দূরত্ব প্রায় ১৭০ কিমি এবং সময় লাগে প্রায় ৪-৫ ঘন্টা। NH16 (পুরোনো NH6) ধরে যেতে হয়। রাস্তার অবস্থা সাধারণত ভালো।
* বাসে: ধর্মতলা (এসপ্ল্যানেড) থেকে ঝাড়গ্রামের জন্য নিয়মিত বাস পরিষেবা আছে।