ডুলুং নদী
ঝাড়গ্রামের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি হলো ডুলুং নদী। সুবর্ণরেখা নদীর একটি উপনদী হিসাবে পরিচিত এই নদী, এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। ঝাড়গ্রামের চিল্কিগড় অঞ্চলে কনক দুর্গা মন্দিরের কাছে এই নদীটি বিশেষভাবে পরিচিত।
ডুলুং নদী ভ্রমণের জন্য বিস্তারিত তথ্য:
ভ্রমণের সেরা সময়:
* শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি): এই সময় আবহাওয়া খুব আরামদায়ক থাকে, যা ভ্রমণের জন্য আদর্শ।
* বর্ষাকাল (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর): বর্ষায় নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পায় এবং চারপাশের প্রকৃতি সবুজ হয়ে ওঠে। এই সময় নদী তার পূর্ণ রূপ ধারণ করে, যা দেখতে খুব সুন্দর লাগে। তবে, বর্ষাকালে কজওয়ের উপর দিয়ে জল প্রবাহিত হয় এবং নদীর স্রোত বেশি থাকে, তাই সতর্ক থাকা উচিত।

ডুলুং নদীর আকর্ষণ:
* প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: ডুলুং নদীর তীরবর্তী এলাকা শাল, পিয়াল, মহুয়া এবং অন্যান্য গাছের ঘন জঙ্গলে আবৃত। এখানকার শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ মনকে শান্তি দেয়।
* ঐতিহাসিক গুরুত্ব: কথিত আছে যে মারাঠা দস্যু বর্গিদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখানকার রাজা ধবলদেব ডুলুং নদীর তীরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন।
* নৌকাবিহার: কনক দুর্গা মন্দিরের কাছে অনেক সময় নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা থাকে।
* কনক দুর্গা মন্দির: ডুলুং নদীর পাশেই অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দিরটি ঝাড়গ্রামের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এটি প্রায় ৩০০ প্রজাতির গাছপালায় ঘেরা এক পবিত্র অরণ্যের মাঝে অবস্থিত।
* চিল্কিগড় রাজবাড়ি: নদীর কাছেই রয়েছে চিল্কিগড়ের ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ি, যা ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।


কিছু টিপস:
* নদীর তীরে ভ্রমণের সময় স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিতে পারেন।
* বর্ষাকালে নদীতে নামার আগে সতর্ক থাকুন, কারণ জলের স্রোত বিপজ্জনক হতে পারে।
* ঝাড়গ্রাম ভ্রমণে গেলে ডুলুং নদীর পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, সাবিত্রী মন্দির, ঝাড়গ্রাম মিনি জু, এবং বেলপাহাড়ির মতো অন্যান্য স্থানগুলোও ঘুরে দেখতে পারেন।
* থাকার জন্য ঝাড়গ্রামে অনেক হোটেল, রিসর্ট এবং হোমস্টে আছে। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম এবং বন উন্নয়ন নিগমের রিসর্টগুলিও ভালো বিকল্প।
কিভাবে এখানে আসবেন
* কলকাতা থেকে: কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ট্রেন বা বাস।
* ট্রেন: হাওড়া থেকে ঝাড়গ্রামের জন্য অনেক ট্রেন পাওয়া যায়, যেমন ইস্পাত এক্সপ্রেস, টাটা স্টিল এক্সপ্রেস, লালমাটি এক্সপ্রেস ইত্যাদি।
* বাস: ধর্মতলা বা করুণাময়ী থেকে সরাসরি ঝাড়গ্রামের বাস পাওয়া যায়।
* গাড়ি: ব্যক্তিগত গাড়িতে গেলে কলকাতা থেকে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
* ঝাড়গ্রাম থেকে ডুলুং নদী: ঝাড়গ্রাম শহরে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ডুলুং নদী এবং চিল্কিগড় রাজবাড়ি বা কনক দুর্গা মন্দিরের কাছে যাওয়া যায়। এই স্থানগুলো ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।