মুর্শিদাবাদ জেলার পর্যটন কেন্দ্র গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ

মুর্শিদাবাদ বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। একসময় এটি ছিল বাংলার নবাবদের রাজধানী। তাই এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান ও দর্শনীয় জিনিস। মুর্শিদাবাদ জেলার কিছু প্রধান পর্যটন কেন্দ্র নিচে তুলে ধরা হলো:

হাজারদুয়ারী প্রাসাদ ও সংলগ্ন স্থান

মুর্শিদাবাদের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হলো হাজারদুয়ারী প্রাসাদ (Hazarduari Palace)। এর আসল নাম ‘বড় কোঠি’। এই তিনতলা প্রাসাদটি ব্রিটিশ স্থপতি ডানকান ম্যাকলিয়ড ১৮৩৭ সালে নবাব নাজিম হুমায়ুন জাহের জন্য তৈরি করেন। এর এক হাজার দরজার মধ্যে ৯০০টি আসল এবং বাকি ১০০টি নকল, যা স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর, যেখানে নবাবদের ব্যবহৃত নানান জিনিসপত্র, অস্ত্রশস্ত্র, চিত্রকর্ম, আসবাবপত্র ইত্যাদি প্রদর্শিত হয়।

হাজারদুয়ারী প্রাসাদের পাশেই রয়েছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান:

 * নিজামত ইমামবাড়া (Nizamat Imambara): এটি ভারতের বৃহত্তম শিয়া ইমামবাড়া এবং এটি হাজারদুয়ারী প্রাসাদের ঠিক উল্টো দিকে অবস্থিত।

 * ওয়াসেফ মঞ্জিল (Wasif Manzil): এটি নবাব ওয়াসেফ আলি মির্জা দ্বারা নির্মিত, যা ‘নতুন প্রাসাদ’ নামেও পরিচিত।

 * ঘড়িঘর বা ক্লক টাওয়ার (Clock Tower): এটি একটি পুরোনো ঘড়ি মিনার যা প্রাসাদের কাছেই অবস্থিত।

ঐতিহাসিক মসজিদ ও সমাধি

মুর্শিদাবাদে অসংখ্য ঐতিহাসিক মসজিদ ও সমাধিস্থল রয়েছে যা নবাবী আমলের স্থাপত্যের সাক্ষ্য বহন করে:

 * কাটরা মসজিদ (Katra Masjid): ১৭২৩-২৪ সালে নির্মিত এই মসজিদটি একটি বিশাল স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন। এখানে নবাব মুর্শিদ কুলি খানের সমাধি রয়েছে। এটি সেই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাফেলা কেন্দ্রও ছিল।

 * খোশবাগ (Khoshbagh): ভাগীরথী নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত এই শান্ত ও মনোরম বাগানটিতে নবাব আলীবর্দী খান, সিরাজ-উদ-দৌলা এবং তাঁর স্ত্রী লুৎফুন্নিসার সমাধি রয়েছে।

 * জাফরাগঞ্জ কবরস্থান (Jafarganj Cemetery): এখানে মীরজাফরের পরিবারের সদস্যদের কবর রয়েছে। এটি ‘নমক হারাম দেওড়ি’ নামেও পরিচিত।

 * আজিমুন্নেশার সমাধি (Tomb of Azimunnisa Begum): নবাব মুর্শিদ কুলি খানের কন্যা আজিমুন্নেশার সমাধিটি স্থাপত্যের দিক থেকে বেশ আকর্ষণীয়।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

মুর্শিদাবাদে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে:

 * মতিঝিল (Motijheel): এটি একটি ঘোড়ার নালের আকৃতির হ্রদ, যা ঘসেটি বেগমের স্বামী নওয়াজেশ মোহাম্মদ খনন করেছিলেন। এর পাশেই রয়েছে একটি পুরোনো মসজিদ।

 * জগৎ শেঠের বাড়ি (House of Jagat Seth): এই বাড়িটি তৎকালীন বাংলার ধনী ব্যাঙ্কার জগৎ শেঠের বাসস্থান ছিল। এখানে সেই সময়ের বাণিজ্য ও আর্থিক ইতিহাসের ঝলক পাওয়া যায়।

 * কাঠগোলা বাগান (Kathgola Bagan): এটি জিয়াগঞ্জের রাজা লক্ষ্মীপৎ সিং দুগর দ্বারা নির্মিত একটি বাগানবাড়ি। এখানে একটি জৈন মন্দিরও রয়েছে, যা শিল্পকলার এক অপূর্ব উদাহরণ।

 * নশিপুর রাজবাড়ি (Nashipur Rajbari): এটি একটি প্রাচীন রাজবাড়ি, যা নশিপুরের রাজা দেবী সিং তৈরি করেছিলেন। এখানে রাজাদের জীবনযাত্রার অনেক নিদর্শন রয়েছে।

 * কিরীটেশ্বরী মন্দির (Kiriteswari Temple): এটি ৫১টি শক্তিপীঠের অন্যতম, যা হিন্দুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।

এছাড়াও রয়েছে আরও অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র।

আপনি মুর্শিদাবাদে ঘুরতে গেলে টোটো বা টাঙ্গা ভাড়া করে সহজেই এই জায়গাগুলো দেখতে পারবেন। এখানকার প্রতিটি স্থানই বাংলার গৌরবময় এবং একই সাথে বেদনাদায়ক ইতিহাসের সাক্ষী।

Scroll to Top