হাজারদুয়ারী প্যালেস

হাজারদুয়ারি প্যালেস ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ শহরে ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি একটি নিওক্লাসিক্যাল স্থাপত্যশৈলীর তিনতলা প্রাসাদ যা নবাব নাজিম হুমায়ুন জাঁ-এর আমলে ১৮২৯ থেকে ১৮৩৭ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।
এখানে হাজারটি দরজা থাকার কারণে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘হাজারদুয়ারি’ (হাজার = হাজার, দুয়ারি = দরজা)। যদিও এই হাজারটি দরজার মধ্যে মাত্র ১০০টি আসল দরজা, বাকি ৯০০টি নকল দরজা। এই নকল দরজাগুলো তৈরির পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল শত্রুদের বিভ্রান্ত করা। বর্তমানে প্রাসাদটি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (Archaeological Survey of India) দ্বারা পরিচালিত একটি জাদুঘর।
ভ্রমণের বিস্তারিত বিবরণ:
ইতিহাস ও স্থাপত্য:
* নির্মাণ: নবাব নাজিম হুমায়ুন জাঁ-এর নির্দেশে এই প্রাসাদটি নির্মিত হয়। এর স্থপতি ছিলেন কর্নেল ডানকান ম্যাকলিওড।
* স্থাপত্যশৈলী: এটি ইউরোপীয়, বিশেষ করে ইতালীয় শৈলীর স্থাপত্যের এক দারুণ নিদর্শন। প্রাসাদের সামনে, পাশে এবং পেছনে মোট ৫২টি বিশাল স্তম্ভ রয়েছে।
* নকল দরজা: এই প্রাসাদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর হাজারটি দরজার রহস্য। ৯০০টি নকল দরজা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে দূর থেকে দেখলে সেগুলোকে আসল মনে হয়, যা শত্রুদের বিভ্রান্ত করার জন্য একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
* বিশালতা: প্রাসাদটি ৪১ একর জমির উপর বিস্তৃত এবং এতে ১০০টিরও বেশি ঘর রয়েছে।
জাদুঘরের সংগ্রহ:
* প্রাচীন নিদর্শন: হাজারদুয়ারি প্যালেসের ভেতরে বর্তমানে একটি জাদুঘর রয়েছে যেখানে নবাবদের ব্যবহৃত অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে।
* অস্ত্রাগার: এখানে নবাবদের ব্যবহৃত প্রায় ২৭০০টি অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে নবাব সিরাজউদ্দৌলার ব্যবহৃত তরবারি এবং যে ছুরি দিয়ে মোহাম্মদী বেগ সিরাজকে হত্যা করেছিল, সেটিও রয়েছে।
* অন্যান্য সামগ্রী: জাদুঘরে রয়েছে নানা ধরনের শিল্পকর্ম, হাতির দাঁতের কারুকার্য, পোশাক, আসবাবপত্র এবং ঐতিহাসিক চিত্রকর্ম। এখানে একটি বিশাল ঝাড়বাতিও দেখতে পাওয়া যায় যা বলা হয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম।
ভ্রমণের সময় ও টিকিট:
* খোলার সময়: হাজারদুয়ারি প্যালেস সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
* বন্ধের দিন: প্রতি শুক্রবার জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।

* টিকিট: প্যালেসের প্রাঙ্গণে প্রবেশ এবং জাদুঘরের ভেতরে প্রবেশের জন্য টিকিট কাটতে হয়। টিকিটের মূল্য সাধারণত ভারতীয় নাগরিকদের জন্য কম এবং বিদেশিদের জন্য কিছুটা বেশি। অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থাও রয়েছে।
আশেপাশে দর্শনীয় স্থান:
হাজারদুয়ারি প্যালেসের পাশেই আরও কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। যেমন:
* নিজামত ইমামবাড়া: এটি এশিয়ার বৃহত্তম ইমামবাড়া। এটি হাজারদুয়ারি প্রাঙ্গণের ভেতরেই অবস্থিত।
* বাচ্চাওয়ালি তোপ: প্রাসাদের সামনেই একটি বিশাল কামান দেখতে পাওয়া যায়, যার নাম বাচ্চাওয়ালি তোপ।
* ঘড়ি মিনার: এটিও হাজারদুয়ারি প্রাঙ্গণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
* অন্যান্য স্থান: কাছাকাছি আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে যেমন খোশবাগ, মোতঝিল, কাটরা মসজিদ, নসিপুর প্রাসাদ, কাঠগোলা বাগানবাড়ি ইত্যাদি।
Google Maps
কিভাবে এখানে আসবেন
* ট্রেনে: কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ পৌঁছানোর জন্য অনেক ট্রেন রয়েছে। মুর্শিদাবাদ স্টেশন থেকে হাজারদুয়ারি প্যালেস খুব কাছেই।
* বাসে: সড়কপথেও বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে মুর্শিদাবাদ যাওয়া যায়।
* কলকাতা থেকে: কলকাতা থেকে একদিনের ভ্রমণের জন্য হাজারদুয়ারি একটি আদর্শ স্থান।