1100 কবরস্থান

মুর্শিদাবাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে জাফরাগঞ্জ কবরস্থান (Zafraganj Cemetery) অন্যতম, যা স্থানীয়ভাবে “১১০০ কবরস্থান” নামেও পরিচিত। এই স্থানটি কেবল একটি সমাধিক্ষেত্র নয়, বরং বাংলার ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ের নীরব সাক্ষী।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

 * মীরজাফরের সমাধি: এই কবরস্থানটি মূলত নবাব মীরজাফর এবং তাঁর পরবর্তী নাজাফি রাজবংশের নবাবদের সমাধিক্ষেত্র। ১৭৬৫ সালে মীরজাফরের মৃত্যুর পর এখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

 * বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক: পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা বাংলার ইতিহাসে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। এই কবরস্থানটি সেই ঘটনার করুণ পরিণতির প্রতীক।

 * ১১০০টি কবর: এখানে মীরজাফর ও তাঁর পরিবারের সদস্য ছাড়াও অন্যান্য ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সমাধি রয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এখানে ১১০০টি কবর আছে, যদিও এর সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

ভ্রমণ তথ্য:

 * অবস্থান: এটি মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারী প্যালেস থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে, ভাগীরথী নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত।

 * কী দেখবেন:

   * মীরজাফরের সমাধি: এখানে তাঁর বড়সড় সমাধিটি দেখতে পাবেন।

   * নাজাফি নবাবদের কবর: মীরজাফরের বংশধর যেমন – নবাব নাজিম হুমায়ুন জাহ ও অন্যান্য নবাবদের কবরও এখানে রয়েছে।

   * স্থাপত্যশৈলী: কবরস্থানের প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী এবং শান্ত পরিবেশ আপনাকে ইতিহাসের এক গভীর অনুভূতি দেবে।

 * ভ্রমণের সময়: সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে। ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ (Archaeological Survey of India) এটি রক্ষণাবেক্ষণ করে।

আশেপাশের অন্যান্য স্থান:

জাফরাগঞ্জ কবরস্থানের কাছেই আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে, যা আপনি একই দিনে ঘুরে দেখতে পারেন:

 * হাজারদুয়ারী প্যালেস ও ইমামবাড়া: মুর্শিদাবাদের প্রধান আকর্ষণ।

 * কাঠগোলা বাগান: একটি সুন্দর বাগান ও জৈন মন্দির।

 * জগৎ শেঠের বাড়ি: ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান।

 * খোশবাগ: সিরাজ-উদ-দৌলা এবং তাঁর পরিবারের সমাধি রয়েছে এই স্থানে। এটি ভাগীরথী নদীর ওপারে অবস্থিত।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

 * ঐতিহাসিক স্থান হওয়ায় এখানে প্রবেশ টিকিট লাগে।

 * গরমের সময় গেলে সকাল বা সন্ধ্যার দিকে যাওয়া ভালো।

 * ভ্রমণের সময় কোনো স্থানীয় গাইডকে ভাড়া করলে ইতিহাসের অজানা অনেক তথ্য জানতে পারবেন।

জাফরাগঞ্জ কবরস্থান ভ্রমণ করলে আপনি বাংলার ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন, যা আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে।

কিভাবে এখানে আসবেন

 * কলকাতা থেকে:

   * ট্রেন: কলকাতা (শিয়ালদহ বা কলকাতা স্টেশন) থেকে একাধিক ট্রেন যেমন – Hazarduari Express, Teesta Torsha Express, Lalgola Passenger Express ইত্যাদি মুর্শিদাবাদ যায়। ট্রেন থেকে নেমে স্টেশন থেকে টোটো বা রিকশা ভাড়া করে জাফরাগঞ্জ কবরস্থান যেতে পারেন।

   * সড়কপথ: কলকাতা থেকে বাসে বা ব্যক্তিগত গাড়িতেও যাওয়া যায়। দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। সময় লাগে ৪-৫ ঘণ্টা।

 * মুর্শিদাবাদ থেকে:

   * হাজারদুয়ারী প্যালেস থেকে টোটো বা রিকশায় সহজেই জাফরাগঞ্জ কবরস্থান পৌঁছানো যায়।

Google Maps

Scroll to Top