বড় সোনা বা বারোদুয়ারি মসজিদ


মালদা জেলার গৌড়ে অবস্থিত বড় সোনা মসজিদ একটি ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি গৌড়ের সবচেয়ে বড় মসজিদ এবং এটি বারোদুয়ারি মসজিদ নামেও পরিচিত। মালদা ভ্রমণে গেলে এই মসজিদটি আপনার ভ্রমণ তালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত।
বড় সোনা মসজিদের ইতিহাস ও স্থাপত্য
বড় সোনা মসজিদ আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল এবং তাঁর পুত্র নাসিরুদ্দিন নুসরাত শাহ ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে এটি সম্পন্ন করেন। এর ইন্দো-আরবি স্থাপত্যশৈলী এবং পাথরের অলঙ্কৃত কাজ পর্যটকদের কাছে এটিকে বিশেষ আকর্ষণীয় করে তোলে। যদিও এর আরেক নাম ‘বারোদুয়ারি’ যার অর্থ ১২টি দরজা, বাস্তবে এখানে ১১টি দরজা রয়েছে।
মসজিদের গম্বুজগুলো একসময় সোনালি রঙের আস্তরণে ঢাকা ছিল, তাই এটি “বড় সোনা মসজিদ” নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি বিশাল ইটের গাঁথুনি দিয়ে তৈরি, যার বাইরের অংশ পাথর দ্বারা আবৃত ছিল। এর আয়তন প্রায় ২০০ ফুট x ২০০ ফুট। মসজিদের চারটি কোণায় এবং কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি বুরুজ এর সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। ভেতরের প্রার্থনা কক্ষে তিনটি আইল এবং এগারোটি সারি রয়েছে। অলঙ্করণ তুলনামূলকভাবে সাদামাটা হলেও, এর বিশাল আয়তন এবং গাম্ভীর্য এটিকে অনন্য করে তুলেছে।
ভ্রমণের জন্য কিছু তথ্য
* অবস্থান: মালদা জেলার গৌড়ে, রামকেলি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এটি মালদা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে।
* পরিদর্শনের সময়: সাধারণত সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। তবে, যেকোনো পরিবর্তনের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে নেওয়া ভালো।
* প্রবেশ মূল্য: এই মসজিদে প্রবেশ করার জন্য কোনো প্রবেশ মূল্য লাগে না। ছবি তোলার জন্যও কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
* কী দেখবেন:
* মসজিদের বিশাল কাঠামো এবং এর স্থাপত্যশৈলী।
* পাথরের কারুকার্য এবং দেয়াল খোদাই করা শিল্পকর্ম।
* এর ভেতরের প্রার্থনা কক্ষ।
* মসজিদের দুটি বিশাল তোরণ।

* গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
* আশেপাশের ঐতিহাসিক স্থানগুলো যেমন – আদিনা মসজিদ, ফিরোজ মিনার, দাখিল দরওয়াজা, কদম রসুল মসজিদ, চিকমাটি মসজিদ ইত্যাদিও ঘুরে দেখতে পারেন। গৌড় নিজেই একটি প্রাচীন রাজধানী শহর যেখানে অনেক ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
* গরমকালে গেলে পর্যাপ্ত জল এবং সানস্ক্রিন সাথে রাখুন।
* আরামদায়ক জুতো পরুন কারণ অনেক হাঁটাহাঁটি করতে হতে পারে।
* ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে একজন স্থানীয় গাইড নিতে পারেন।
বড় সোনা মসজিদ মালদার সমৃদ্ধ মুসলিম ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন। এই স্থানটি ইতিহাস ও স্থাপত্যপ্রেমীদের জন্য একটি দারুণ অভিজ্ঞতা দিতে পারে।
কিভাবে এখানে আসবেন
গৌড়ের ভেতরে ঘোরার জন্য অটো-রিকশা, সাইকেল রিকশা বা স্থানীয় ট্যাক্সি পাওয়া যায়। যেহেতু গৌড়ের ঐতিহাসিক স্থানগুলো একে অপরের কাছাকাছি অবস্থিত, তাই মালদা টাউন থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে সবগুলো স্থান ঘুরে দেখা সুবিধাজনক হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
* ভ্রমণের আগে ট্রেনের সময়সূচী বা বাসের টিকিট সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
* যদি আপনি ব্যক্তিগত গাড়ি বা ট্যাক্সি ভাড়া করেন, তাহলে চালকের সাথে ভাড়ার বিষয়ে আগে থেকেই কথা বলে নিন।
* গৌড়ে প্রবেশ করার সময় কিছু এলাকায় প্রবেশ ফি লাগতে পারে, যদিও বড় সোনা মসজিদের জন্য কোনো প্রবেশ ফি নেই।