বক্সা টাইগার রিজার্ভ

বক্সা টাইগার রিজার্ভ (Buxa Tiger Reserve) পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায়, ভুটান ও আসাম সীমান্তের কাছে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জাতীয় উদ্যান। ডুয়ার্স অঞ্চলের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত এই সংরক্ষিত বনভূমিটি এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য সুপরিচিত।
ইতিহাস
বক্সা টাইগার রিজার্ভ ১৯৮৩ সালে ভারতের ১৫তম ব্যাঘ্র সংরক্ষণাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত বক্সা দুর্গ থেকে, যা এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। ভুটানের রাজারা এই দুর্গটি ভারত ও তিব্বতের মধ্যে বিখ্যাত সিল্ক রুট রক্ষার জন্য ব্যবহার করতেন। ব্রিটিশ শাসনামলে এটি একটি ডিটেনশন ক্যাম্প হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে, বক্সা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ৩১৪.৫২ বর্গ কিলোমিটার সংরক্ষিত বনভূমি নিয়ে গঠিত হয়, এবং পরে ১৯৯১ সালে আরও ৫৪.৪৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা এর সাথে যুক্ত করা হয়।

অবস্থান ও আয়তন
বক্সা টাইগার রিজার্ভ ডুয়ার্স অঞ্চলের বৃহত্তম বনভূমি। এর উত্তরে ভুটান, পূর্বে জয়ন্তী নদী এবং পশ্চিমে চেকো নদী দ্বারা বেষ্টিত। এই উদ্যানটির আয়তন প্রায় ৭৬০ বর্গ কিলোমিটার। এটি গাঙ্গেয় সমভূমি থেকে প্রায় ৬০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানকার জঙ্গল এত ঘন যে কিছু কিছু জায়গায় সূর্যের আলোও প্রবেশ করতে পারে না।
জীববৈচিত্র্য
বক্সা টাইগার রিজার্ভ জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখা যায়:
* স্তন্যপায়ী প্রাণী: এখানে এশীয় হাতি, বাঘ (রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার), গৌর (ভারতীয় বাইসন), বুনো শুয়োর, শম্বর হরিণ, চিতল হরিণ, ক্লাউডেড চিতাবাঘ, ভালুক, সিভেট, দৈত্যাকার কাঠবিড়ালী, বুনো মোষ, প্যাঙ্গোলিন, এবং সম্প্রতি বিরল প্রজাতির লিনস্যাং ও বিপন্ন প্রজাতির বন্য কুকুর ঢোল-এর ছবিও ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
* পাখি: এই অভয়ারণ্যে ২৮৪ প্রজাতির পাখি দেখা যায়, যার মধ্যে বিপন্ন প্রজাতির বেঙ্গল ফ্লোরিকান উল্লেখযোগ্য।
* সরীসৃপ ও উভচর: এখানে ৭৬ প্রজাতির সাপ এবং ৫ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে।

* মাছ: ২০০৬ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ সংখ্যক মাছের প্রজাতি বক্সা জাতীয় উদ্যানে দেখা যায়।
পর্যটন ও আকর্ষণ
রাজাভাতখাওয়া হল বক্সা টাইগার রিজার্ভের মূল প্রবেশদ্বার। পর্যটকদের জন্য এখানে জঙ্গল সাফারি (জিপসি সাফারি) এবং ওয়চ টাওয়ার থেকে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে ট্রেকিং করারও সুযোগ আছে, বিশেষ করে ঐতিহাসিক বক্সা দুর্গ এবং ছোট মহাকাল গুহা-তে যাওয়া যায়। জয়ন্তী নদীর সৌন্দর্য এবং চারপাশের পাহাড় ও জঙ্গলের মেলবন্ধন পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
একটু জানিয়ে রাখি

কিভাবে এখানে আসবেন
* ট্রেন: নিকটতম রেল স্টেশনগুলি হল আলিপুরদুয়ার জংশন বা নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন। এই স্টেশনগুলো থেকে ট্যাক্সি বা স্থানীয় পরিবহনে বক্সা টাইগার রিজার্ভে পৌঁছানো যায়।
* বিমান: নিকটতম বিমানবন্দর হল বাগডোগরা বিমানবন্দর (IXB)। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বক্সায় যাওয়া যায়।
* সড়কপথ: শিলিগুড়ি, কোচবিহার বা আলিপুরদুয়ার থেকে সড়কপথে সহজেই বক্সায় পৌঁছানো যায়।
শান্তারাবাড়ি হয়ে আলিপুরদুয়ার থেকে বক্সা দুয়ার এর দূরত্ব প্রায় ৩৩ কিলোমিটার।
শান্তারাবাড়ি থেকে দু কিলোমিটার গাড়িতে গিয়ে শেষ দু কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হবে বক্সা দুর্গ বা বক্সা দুয়ার।
রাজাভাতখাওয়া থেকে বক্সা দুয়ারের দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার।