চরিদা মুখোশ গ্রাম
পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকে অবস্থিত চরিদা মুখোশ গ্রাম ছৌ নাচের মুখোশ তৈরির জন্য বিশ্ববিখ্যাত। এটি ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ-এর তালিকায় স্থান পেয়েছে। এই গ্রামটি পুরুলিয়ার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এখানে আপনার ভ্রমণের জন্য কিছু বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:
কোথায় থাকবেন?
চরিদা গ্রামে সরাসরি থাকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই পুরুলিয়া বা অযোধ্যা পাহাড়ের আশেপাশে থাকাটাই সুবিধাজনক।
* অযোধ্যা পাহাড়: চরিদা থেকে অযোধ্যা পাহাড় খুব কাছে। আপনি অযোধ্যা পাহাড়ে থাকতে পারেন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন লজ এবং অনেক বেসরকারি রিসর্ট ও হোমস্টে রয়েছে।
* বাঘমুন্ডি: বাঘমুন্ডি হলো চরিদার সবচেয়ে কাছের শহর। এখানে কিছু থাকার জায়গা আছে। বাঘমুন্ডি থেকে চরিদার দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার।


* পুরুলিয়া শহর: পুরুলিয়া শহরে বিভিন্ন বাজেটের হোটেল ও লজ পাওয়া যায়। এখানে থেকে সারাদিনের জন্য গাড়ি ভাড়া করে চরিদা ঘুরে আসা যায়।
কী দেখবেন ও কী করবেন?
* মুখোশ তৈরির প্রক্রিয়া: চরিদা গ্রামে প্রায় ২৫০টির বেশি পরিবার মুখোশ তৈরির সঙ্গে জড়িত। প্রতিটি মুখোশই হাতে তৈরি হয়। আপনি শিল্পীদের কর্মশালাগুলোতে ঢুকে মুখোশ তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি দেখতে পারবেন। মাটি দিয়ে ছাঁচ তৈরি, তার উপর কাগজের মণ্ড ও কাপড় দিয়ে প্রলেপ দেওয়া, শুকানো এবং সবশেষে উজ্জ্বল রঙে রাঙিয়ে তোলার প্রতিটি ধাপই খুব আকর্ষণীয়।
* ছৌ মুখোশের সংগ্রহশালা: গ্রামে একটি কমিউনিটি মিউজিয়াম আছে যেখানে ছৌ মুখোশের ইতিহাস ও বিভিন্ন ধরনের মুখোশ সম্পর্কে জানতে পারবেন। এটি স্থানীয় শিল্পীদের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এর প্রবেশমূল্য সামান্য।
* কেনাকাটা: গ্রামের দোকানগুলোতে বিভিন্ন আকারের ও দামের মুখোশ পাওয়া যায়। ছোট মুখোশগুলি সাধারণত স্যুভেনিয়ার হিসেবে বেশি চলে, আর বড় মুখোশগুলি বাড়ির সাজসজ্জার জন্য দারুণ। শিল্পীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে দরদাম করে মুখোশ কিনতে পারেন।
ভ্রমণের সেরা সময়
অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চরিদা ভ্রমণের জন্য সেরা সময়। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে। বসন্তকালে গেলে চারপাশে পলাশ ফুলের আগুন-রঙা শোভা দেখতে পাবেন।
চরিদা গ্রামটি শুধু একটি জায়গা নয়, এটি বাংলার এক সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এখানকার মুখোশ শিল্পীরা তাদের হাতের জাদুতে রামায়ণ, মহাভারত ও পৌরাণিক গল্পের চরিত্রগুলিকে জীবন্ত করে তোলেন। অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে এই ছোট্ট গ্রামটি আপনার মন জয় করে নেবে।

Google Maps
কিভাবে এখানে আসবেন
* ট্রেনে: কলকাতা থেকে পুরুলিয়া যাওয়ার জন্য একাধিক ট্রেন আছে। হাওড়া বা শালিমার স্টেশন থেকে আপনি পুরুলিয়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেন ধরতে পারেন (যেমন – হাওড়া-পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস)। পুরুলিয়া স্টেশনে নেমে সেখান থেকে বাস, ট্যাক্সি বা অটো ভাড়া করে চরিদা যেতে পারবেন। পুরুলিয়া স্টেশন থেকে চরিদার দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার।
* সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বরাভূম স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনে যাওয়া। বরাভূম স্টেশন চরিদা গ্রামের সবচেয়ে কাছের স্টেশন, দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। সেখান থেকে গাড়ি বা অটো নিয়ে সহজেই গ্রামে পৌঁছানো যায়।