চিল্কিগড় কনক দুর্গা মন্দির

ঝাড়গ্রাম জেলার চিলকিগড়ে অবস্থিত কনক দুর্গা মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং ইতিহাস, কিংবদন্তি এবং প্রকৃতির এক অসাধারণ মেলবন্ধন। এটি ঝাড়গ্রামের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এই মন্দিরের বিস্তারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা নিচে দেওয়া হলো।

মন্দিরের ইতিহাস ও কিংবদন্তি

 * প্রতিষ্ঠা: এই মন্দিরের ইতিহাস প্রায় সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ বছরের পুরনো। কথিত আছে, চিলকিগড়ের সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ স্বপ্নে দেবীর নির্দেশ পান। দেবী তাঁকে জানান, রানীর হাতের সোনার কাঁকন দিয়ে তাঁর মূর্তি তৈরি করতে। সেই স্বপ্নাদেশ অনুসরণ করে রাজা গোপীনাথ রানীর কাঁকন দিয়ে দেবীর চতুর্ভুজা মূর্তিটি তৈরি করেন এবং নাম দেন ‘কনক দুর্গা’।

* বিগ্রহ: এখানে দেবী চতুর্ভুজা রূপে পূজিত হন এবং তাঁর বাহন ‘গোঘোটক’, যা ঘোড়া ও সিংহের সংমিশ্রণ। এই ধরনের বাহন প্রাচীন বাংলার আদিম মাতৃপূজা এবং দুর্গা পূজার এক অনন্য প্রতীক। যদিও ১৯৬০ সালে মূল মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়, বর্তমানে মন্দিরে অষ্টধাতুর একটি নতুন মূর্তি স্থাপিত হয়েছে।

 * রহস্যময় প্রথা: এই মন্দিরকে ঘিরে কিছু রহস্যময় প্রথা প্রচলিত আছে। জনশ্রুতি আছে যে, নবমীর রাতে দেবীর ভোগ স্বয়ং দেবী নিজেই রান্না করেন। আরেকটি প্রাচীন প্রথা হল ‘নিশাবলি’, যা একসময় নরবলি ছিল বলে প্রচলিত। বর্তমানে প্রতীকী হিসেবে একটি জ্যান্ত পাঁঠার মুখ বন্ধ করে বলি দেওয়া হয়। এরপর সেই পাঁঠার মাংস দিয়ে ভোগ রান্না করা হয়, যা স্থানীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী দেবী নিজেই রান্না করেন।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

 * অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: মন্দিরটি ডুলুং নদীর তীরে গভীর জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। মন্দিরের চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই শান্ত ও মনোরম। এখানে বিভিন্ন ধরনের বিরল প্রজাতির গাছ, পাখি এবং বানর দেখা যায়। শীতকালে কেন্দুয়া নামক একটি স্থানে পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ডুলুং নদী এবং ঘন জঙ্গল ভ্রমণের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়।

 * মন্দির দর্শন: মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হল দেবীর চতুর্ভুজা মূর্তি এবং প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী প্রতিদিনের পুজো ও ভোগ। আপনি চাইলে এখানকার অন্নভোগ প্রসাদের স্বাদ নিতে পারেন। তবে এর জন্য আগে থেকে পুরোহিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা ভালো।

 * আশেপাশের দর্শনীয় স্থান: মন্দির দর্শনের পাশাপাশি আপনি চিলকিগড় রাজবাড়িও ঘুরে দেখতে পারেন। এটি মন্দিরের খুব কাছেই অবস্থিত। এছাড়াও ডুলুং নদীর তীরে সময় কাটাতে পারেন এবং নদীর শান্ত পরিবেশে প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতে পারেন।

থাকার ব্যবস্থা

আগে মন্দির চত্বরে রাতে থাকার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তবে বর্তমানে প্রশাসনের উদ্যোগে অতিথিশালা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে পর্যটকরা থাকতে পারেন। এছাড়াও ঝাড়গ্রাম শহরে থাকার জন্য অনেক হোটেল ও রিসর্ট রয়েছে।

চিলকিগড় কনক দুর্গা মন্দির কেবল একটি তীর্থস্থান নয়, এটি এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রাচীন ইতিহাস এবং আধ্যাত্মিকতার এক অসাধারণ সংমিশ্রণ অনুভব করতে পারবেন।

Google Maps

কিভাবে এখানে আসবেন

* ঝাড়গ্রাম থেকে: ঝাড়গ্রাম শহর থেকে চিলকিগড় কনক দুর্গা মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ১৪-১৫ কিলোমিটার। গাড়ি বা অটো ভাড়া করে খুব সহজেই এখানে পৌঁছানো যায়। সময় লাগে প্রায় ২০-২৫ মিনিট।

 * কলকাতা থেকে: কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রামের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। সড়কপথে গাড়িতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়াও ট্রেন বা বাসে করে ঝাড়গ্রাম পৌঁছে সেখান থেকে স্থানীয় পরিবহণে মন্দিরে যাওয়া যায়।

Scroll to Top