কোচবিহার রাজবাড়ি

কোচবিহার রাজবাড়ি, যা ভিক্টর জুবিলি প্যালেস নামেও পরিচিত, পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। এটি স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন এবং কোচ রাজবংশের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী। কোচবিহার রাজবাড়ি শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়, এটি কোচবিহারের গৌরবময় ইতিহাসের প্রতীক। আপনি যদি কোচবিহার ভ্রমণ করেন, তবে এই রাজবাড়ি পরিদর্শন আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

রাজবাড়ীর ইতিহাস ও স্থাপত্য

কোচবিহার রাজবাড়ি ১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। শোনা যায়, এটি লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের আদলে তৈরি করা হয়েছে। ইষ্টক-নির্মিত এই দোতলা ভবনটি ক্লাসিক্যাল ওয়েস্টার্ন শৈলীতে তৈরি এবং এর আয়তন প্রায় ৫১,৩০৯ বর্গফুট। এর অলংকরণে পোড়ামাটির অলংকরণ দেখা যায়, যাকে ‘বাফ কালার টেরাকোটা’ বলা হয়।

প্রাথমিকভাবে এটি তিনতলা বিশিষ্ট হলেও, ১৮৯৭ সালের এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পে এর তৃতীয় তলটি ভেঙে যায়। প্রাসাদটির একতলায় বিলিয়ার্ড রুম, গ্রন্থাগার, অতিথিশালা এবং ভোজনকক্ষসহ ২৪টি কক্ষ রয়েছে। পুরো রাজপ্রাসাদ জুড়ে ছিল মেহগনি কাঠের আসবাবপত্র। রাজবাড়ির সামনে একটি বিশাল চওড়া রাজপথ এবং সুন্দর বাগান রয়েছে।কোচবিহার একসময় একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল, যেখানে কোচ বংশ প্রায় ৫০০ বছর শাসন করেছে। ১৫৩০ সালে রাজা বিশ্ব সিংহ কোচবিহারে শাসন শুরু করেন এবং তার পুত্র নরনারায়ণ এই রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান। ১৭৭২ সালে ভুটানের সাথে যুদ্ধের পর কোচবিহার ব্রিটিশদের ‘করদ’ রাজ্যে পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর কোচবিহার ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯৫০ সালে পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলায় পরিণত হয়। জয়পুরের বিখ্যাত মহারানী গায়েত্রী দেবী এই কোচ রাজবংশের কন্যা ছিলেন।

প্রবেশ এবং সময়সূচী

 * প্রবেশ মূল্য: ভারতীয়দের জন্য প্রবেশ মূল্য প্রায় ২৫ টাকা। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) এর সাইট থেকে অনলাইনে টিকিট কাটলে মূল্য ২০ টাকা হতে পারে।

 * খোলা থাকার সময়: রাজবাড়িটি সাধারণত সোমবার থেকে রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার বন্ধ থাকে। রাজবাড়ির ভেতরের একটি অংশে রাজবংশের লোকজন এখনও বসবাস করেন, তাই সেখানে সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। তবে বাইরের অংশে দিনের বেলা প্রবেশ করা যায়।

 * লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো: সন্ধ্যায় রাজবাড়ির পেছনের বাগানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো অনুষ্ঠিত হয়, যা রাজবাড়ীর ইতিহাস তুলে ধরে এবং পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।

কিভাবে এখানে আসবেন

কোচবিহার রাজবাড়ি কোচবিহার শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, তাই এখানে পৌঁছানো খুবই সহজ।

* রেলপথে: কোচবিহার রেলওয়ে স্টেশন (NCB) থেকে রাজবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। নিউ জলপাইগুড়ি জংশন (NJP) থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রধান শহরের ট্রেন পাওয়া যায়, সেখান থেকে বাস বা ট্যাক্সিতে কোচবিহার আসা যায়।

* সড়কপথে: কোচবিহার বাস স্ট্যান্ড থেকে রাজবাড়ীর সিংহদুয়ারে পায়ে হেঁটে মাত্র ২ মিনিটের পথ। এছাড়া, কোচবিহার সড়কপথে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য শহর এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সাথে ভালোভাবে সংযুক্ত।

* আকাশপথে: কোচবিহারের নিকটতম বিমানবন্দর হল বাগডোগরা বিমানবন্দর (IXB), যা কোচবিহার থেকে প্রায় ১৫৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাগডোগরা থেকে ট্যাক্সি বা বাস ভাড়া করে কোচবিহার পৌঁছাতে পারবেন। কোচবিহারে একটি নিজস্ব বিমানবন্দরও (কোচবিহার এয়ারপোর্ট) আছে, যদিও এটি থেকে নিয়মিত ফ্লাইট সার্ভিস সবসময় চালু থাকে না।

Google Maps

Scroll to Top