সাগর দিঘী
সাগরদিঘী কোচবিহার শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়। এটি কোচবিহারের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এবং শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এর অবদান অপরিসীম। সাগরদিঘী কোচবিহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক, যা শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বকে তুলে ধরে। এটি একটি শান্ত এবং মনোরম স্থান, যা স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটক উভয়কেই আকর্ষণ করে।
ইতিহাস ও গুরুত্ব
সাগরদিঘী ১৮শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কোচবিহার প্রদেশের শাসক মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণ কর্তৃক খনন করা হয়েছিল। এটি শুধুমাত্র একটি জলাশয় হিসেবেই নয়, বরং প্রতিবেশী কৃষি অঞ্চলে সেচের জন্য জল সংরক্ষণের সুবিধা হিসেবেও তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া, এটি একটি অবসর এলাকা হিসেবেও ডিজাইন করা হয়েছিল।


সাগরদিঘীকে কোচবিহারের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। এর চারপাশে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, যেমন – জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার প্রশাসনিক ভবন, ডিএলআরও অফিস, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার প্রধান শাখা, আরটিও অফিস, জেলা আদালত এবং অসংখ্য আবাসিক ভবন গড়ে উঠেছে।
কোচবিহারকে একটি হেরিটেজ শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, এবং সাগরদিঘী এই হেরিটেজ তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে, যার মধ্যে ঘাট সংস্কার, নতুন রেলিং স্থাপন, আন্ডারগ্রাউন্ড নিকাশি ব্যবস্থা এবং পথবাতি বসানো অন্তর্ভুক্ত।
আকর্ষণ ও বৈশিষ্ট্য
* পরিযায়ী পাখি: শীতকালে সাগরদিঘীর জলে অজস্র পরিযায়ী পাখির সমাবেশ ঘটে, যা পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।
* প্রাতঃভ্রমণ: প্রতিদিন সকালে হাজার হাজার মানুষ এখানে প্রাতঃভ্রমণ করতে আসেন। সূর্যোদয়ের সময় এর জলে সূর্যের প্রথম কিরণ এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে।
* আলোকসজ্জা: সন্ধ্যায় সাগরদিঘী আলোকমালায় সজ্জিত হয়ে ওঠে, যা এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
* মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের মূর্তি: দিঘীর চারপাশে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের একটি প্রস্তর মূর্তি রয়েছে, যা কোচবিহারের ইতিহাসে তাঁর অবদানকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
* প্রাচীন শিব মন্দির: দিঘীর পশ্চিম দিকে একটি প্রাচীন শিব মন্দির রয়েছে, যা স্থানটিকে একটি দৈব বাতাবরণে ভরে তোলে।

কিভাবে এখানে আসবেন
সাগরদিঘী কোচবিহার শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, তাই এখানে পৌঁছানো খুবই সহজ।
* রেলপথে: নিউ কোচবিহার রেলওয়ে স্টেশন (NCB) থেকে সাগরদিঘীর দূরত্ব খুব বেশি নয়। স্টেশন থেকে অটো বা রিকশা করে সহজেই এখানে আসা যায়।
* সড়কপথে: কোচবিহার শহরের যেকোনো স্থান থেকে অটো, রিকশা বা ট্যাক্সি করে সাগরদিঘীতে যাওয়া যায়। এটি শহরের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম এবং সহজেই প্রবেশযোগ্য।
* আকাশপথে: নিকটতম বিমানবন্দর হলো বাগডোগরা বিমানবন্দর (IXB), যা কোচবিহার থেকে প্রায় ১৫১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখান থেকে বাস বা ট্যাক্সিতে কোচবিহার আসা যায়।