ফুল্লারা মাতার মন্দির (সতীপীঠ)

ফুল্লরা সতীপীঠ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর শহরের কাছে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু তীর্থস্থান। এটি ৫১ সতীপীঠের অন্যতম।

ফুল্লরা সতীপীঠের গুরুত্ব ও কিংবদন্তি

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এই স্থানে দেবী সতীর নিম্নাংশ/অধর ওষ্ঠ (Lower Lip) পতিত হয়েছিল। এই মন্দিরে দেবীর কোনো প্রচলিত বিগ্রহ নেই, বরং সিন্দুরচর্চিত একটি কচ্ছপাকৃতি শিলাখণ্ডকেই দেবী ফুল্লরার প্রতিভূ রূপে পূজা করা হয়। এই মন্দিরের ভৈরব হলেন বিশ্বেশ মহাদেব, যাঁর মন্দির মূল ফুল্লরা মন্দিরের কাছেই পীঠচত্বরে অবস্থিত।

অনেক কিংবদন্তি এই পীঠকে ঘিরে প্রচলিত। বলা হয়, রামচন্দ্রের দুর্গাপূজার জন্য হনুমান এই মন্দিরের কাছে অবস্থিত বিশাল পুকুরটি থেকেই ১০৮টি নীলপদ্ম সংগ্রহ করেছিলেন।

ইতিহাস

ফুল্লরা মন্দিরের আদি ইতিহাস বেশ প্রাচীন। সিয়ান প্রশস্তি থেকে জানা যায়, পাল বংশের নয়পাল বা তাঁর পুত্র তৃতীয় বিগ্রহ পাল (আনুমানিক ১০২৭-৭০ খ্রিস্টাব্দ) এই অট্টহাস মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে, দীনমণি মিশ্র বাহাদুরের আমলে মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে কৃষ্ণানন্দ গিরি একটি ছোট মন্দির নির্মাণ করেন। বর্তমান মাতৃমন্দিরটি ১৩০২ বঙ্গাব্দে স্থানীয় জমিদার যাদবলাল বন্দ্যোপাধ্যায় নির্মাণ করেছিলেন, যদিও এটি এখন সংস্কারের ছোঁয়া পেয়ে নতুন রূপ ধারণ করেছে।

ভ্রমণের সেরা সময়

সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফুল্লরা সতীপীঠ ভ্রমণের জন্য আদর্শ, কারণ এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে। প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে এখানে বিশেষ পূজা অর্চনা হয় এবং বিশাল মেলা বসে। এই সময় দেশ-বিদেশ থেকে বহু ভক্ত মায়ের দর্শন ও আশীর্বাদ লাভের জন্য ছুটে আসেন।

কিছু টিপস

 * মন্দিরে কোনো দেবী মূর্তি নেই, কচ্ছপাকৃতি শিলাখণ্ডই দেবীর প্রতিভূ।

 * এখানে প্রতিদিন নিত্য ভোগ প্রস্তুত করা হয়, যা ভক্তরা প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।

 * মন্দির চত্বরে পঞ্চমুন্ডির আসনও রয়েছে।

ফুল্লরা সতীপীঠ একটি পবিত্র এবং শান্তিময় স্থান, যা আপনাকে আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বাংলার গ্রামীণ সৌন্দর্যেরও স্বাদ দেবে।

Google Maps

কিভাবে এখানে আসবেন

ফুল্লরা সতীপীঠ বীরভূম জেলার লাভপুরে অবস্থিত। এটি বোলপুর শান্তিনিকেতন থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে।

 * ট্রেনে:

   * শিয়ালদহ থেকে: শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ধরে বীরভূমের আহমেদপুর জংশন স্টেশনে নামতে পারেন। স্টেশন থেকে বাস বা টোটো করে প্রায় ১১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে লাভপুরের ফুল্লরা স্টপেজে পৌঁছাতে পারবেন। সেখান থেকে হেঁটে ১০ মিনিটের মধ্যে মন্দিরে পৌঁছানো যায়।

   * হাওড়া থেকে: হাওড়া থেকে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ধরে বোলপুর স্টেশন-এ নামতে পারেন। বোলপুর বাস স্ট্যান্ড বা চিত্রা মোড় বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে করে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে লাভপুরের ফুল্লরা স্টপেজে নামুন। সেখান থেকে হেঁটে মন্দিরে যাওয়া যাবে।

 * সড়কপথে: কলকাতা বা অন্যান্য শহর থেকে বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে লাভপুরে পৌঁছাতে পারেন।

Scroll to Top