গরুমারা জাতীয় উদ্যান


গরুমারা জাতীয় উদ্যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উদ্যান। এটি উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলের হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত।
অবস্থান ও আয়তন
গরুমারা জাতীয় উদ্যান জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত এবং এটি ডুয়ার্সের জলদাপাড়া-চাপড়ামারি-গরুমারা রেঞ্জের একটি অংশ। এটি প্রায় ৮০ বর্গ কিলোমিটার (মতান্তরে ১৩০০ বর্গ কিলোমিটার) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। মূর্তি, জলঢাকা, ইংডং ও গরাতি নদী এই বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
ইতিহাস
১৮৯৫ সাল থেকে গরুমারা একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল। ভারতীয় গন্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ১৯৪৯ সালে এটিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ৩১শে জানুয়ারি, ১৯৯২ (মতান্তরে ১৯৯৪) সালে এটিকে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা দেওয়া হয়।
কেন বিখ্যাত?
গরুমারা জাতীয় উদ্যান মূলত একশৃঙ্গ গন্ডারের (Indian Rhinoceros) আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এই উদ্যান গন্ডার সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, এটি ২০০৯ সালে ভারতের পরিবেশ ও অরণ্য মন্ত্রক দ্বারা ভারতের সংরক্ষিত এলাকাগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা লাভ করে।
বন্যপ্রাণী
এই উদ্যানে বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণী দেখা যায়। গন্ডার ছাড়াও এখানে রয়েছে:
* স্তন্যপায়ী প্রাণী: হাতি, বাইসন (গৌর), চিতাবাঘ, সম্বর হরিণ, চিত্রা হরিণ, বার্কিং ডিয়ার (কুকুর হরিণ), হগ ডিয়ার, বুনো শুয়োর, ভাল্লুক, এবং বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাংসাশী প্রাণী।
* পাখি: অসংখ্য প্রজাতির পাখি এই উদ্যানের শোভা বৃদ্ধি করে, যার মধ্যে ময়ূর, ধনেশ, কাঠঠোকরা, সবুজ পায়রা, ঈগল এবং বিভিন্ন

পরিযায়ী পাখি উল্লেখযোগ্য।
* সরীসৃপ: এখানে বিভিন্ন ধরণের সাপ দেখা যায়, যার মধ্যে কিং কোবরা এবং অজগর উল্লেখযোগ্য।
পর্যটন
গরুমারা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে জঙ্গল সাফারি (গাড়ি বা জিপসি দ্বারা) এবং বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ার (যেমন যাত্রাপ্রসাদ, মেদলা, চন্দ্রচূড়) থেকে বন্যপ্রাণী দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। মোষের গাড়িতে চড়ে মেদলা ওয়াচ টাওয়ারে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। স্থানীয় আদিবাসী নৃত্য দেখার সুযোগও এখানে পাওয়া যায়।
গরুমারা জাতীয় উদ্যান সাধারণত বর্ষাকালে (১৫ই জুন থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বন্ধ থাকে। তাই ভ্রমণের পরিকল্পনা করার আগে এই বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন।
কিভাবে এখানে আসবেন
আকাশপথে:
* নিকটতম বিমানবন্দর হলো বাগডোগরা বিমানবন্দর (IXB), যা শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানবন্দর থেকে গরুমারা পৌঁছানোর জন্য ট্যাক্সি বা বাস পাওয়া যায়।
রেলপথে:
* নিকটতম রেলওয়ে স্টেশনগুলি হলো নিউ ময়নাগুড়ি (প্রায় ২০ কিলোমিটার) এবং নিউ মাল জংশন (প্রায় ৩০ কিলোমিটার)। এই স্টেশনগুলি থেকে স্থানীয় পরিবহন যেমন ট্যাক্সি বা অটো রিকশা করে গরুমারা পৌঁছানো যায়।
সড়কপথে:
* গরুমারা জাতীয় উদ্যান সড়কপথে বেশ ভালোভাবে সংযুক্ত। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক (NH 31) এর কাছাকাছি অবস্থিত।
* চালসা এবং লাটাগুড়ি হলো নিকটবর্তী প্রধান জনপদ, যেখান থেকে গরুমারার মধ্যস্থলে পৌঁছানো যায় (প্রায় ১২ কিলোমিটার)। এই স্থানগুলি থেকে জিপ ভাড়া করে বা বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করা যায়।
* লাটাগুড়ি প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র থেকে বনে প্রবেশের অনুমতি ও গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক।
পর্যটকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন রিসর্ট এবং ইকো-লজও গড়ে উঠেছে, যা যাতায়াতের ক্ষেত্রে সহায়তা করে।