হেতমপুর রাজবাড়ি

হেতমপুর রাজবাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সিউড়ি মহকুমার একটি ঐতিহাসিক স্থান। এটি দুবরাজপুরের কাছে অবস্থিত এবং তার রাজকীয় প্রাসাদ ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের জন্য পরিচিত। হেতমপুর রাজবাড়ী বীরভূমের এক লুকানো রত্ন, যা ইতিহাস ও স্থাপত্যপ্রেমীদের জন্য একটি অসাধারণ গন্তব্য।

ইতিহাস

হেতমপুর রাজবাড়ির ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। এটি একসময় হেতমপুর রাজবংশের কেন্দ্র ছিল, যারা বীরভূমের অন্যতম শক্তিশালী জমিদার পরিবার ছিলেন। কথিত আছে, বীরভূমে প্রাচীন হিন্দু রাজ্য ছিল এবং তারা সাঁওতাল বিদ্রোহে সাঁওতালদের পরাজিত করেছিলেন এবং বর্গী ও মারাঠা আক্রমণও মোকাবিলা করেছিলেন।

১৯০৫ সালে মহারাজা রামরঞ্জন চক্রবর্তী এই রাজবাড়ী নির্মাণ করেন।

এটি রঞ্জন প্রাসাদ বা হেতমপুরের হাজারদুয়ারী নামেও পরিচিত, কারণ প্রাসাদটি দুর্গের আকারে ৯৯৯টি দরজা নিয়ে তৈরি হয়েছিল। মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারী প্রাসাদের প্রতি সম্মান রেখে এখানে একটি দরজা কম রাখা হয়েছিল।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে হেতমপুর রাজবাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং চারণকবি মুকুন্দ দাস ব্রিটিশদের নজর এড়াতে এই রাজবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যদিও পরে তারা ধরা পড়েছিলেন।

বর্তমানে রাজবাড়ীর কিছু অংশ DAV স্কুল এবং একটি B.Ed কলেজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর কিছু অংশ এখনো রাজপরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন।

স্থাপত্য ও আকর্ষণ

হেতমপুর রাজবাড়ীর স্থাপত্য ইউরোপীয় রীতির অনুকরণে নির্মিত। বিশাল আকারের লাল ইটের প্রবেশদ্বার, তাতে কোরিন্থিয়ান স্তম্ভ, খিলানযুক্ত জানালা ও প্রবেশপথ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এছাড়াও, এখানে বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর আকর্ষণীয় পোড়ামাটির মন্দির রয়েছে। দেওয়ানজি মন্দির এবং চন্দ্রনাথ শিব মন্দির (১৮৪৭ সালে নির্মিত) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পরিদর্শনের সময়

রাজবাড়ীর কিছু অংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় জনসাধারণের জন্য সব অংশে প্রবেশের অনুমতি নাও থাকতে পারে। সাধারণত এটি সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে, তবে বিদ্যালয়ের ছুটির সময়ে প্রবেশাধিকার আরও বেশি হতে পারে। কিছু অংশে প্রবেশের জন্য নিরাপত্তা কর্মীদের বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হতে পারে।

কিভাবে এখানে আসবেন

 * রেলপথে: দুবরাজপুর রেল স্টেশন হেতমপুরের নিকটতম স্টেশন। সেখান থেকে টোটো বা অটোতে রাজবাড়ী পৌঁছানো যায়। সিউড়ি গামী ট্রেনে উঠে দুবরাজপুর স্টেশনে নামতে হবে।

 * সড়কপথে:

   * কলকাতা থেকে: ধর্মতলা থেকে সিউড়িগামী যেকোনো বাসে দুবরাজপুরে নেমে সেখান থেকে টোটো করে হেতমপুর যাওয়া যায়। নিজের গাড়িতে এলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পানাগড় পেরিয়ে ইলামবাজারের দিকে যাওয়া রাস্তা ধরে বাঁদিকে দুবরাজপুরের রাস্তা নিলেই হেতমপুর পাওয়া যাবে।

   * শান্তিনিকেতন থেকে: বাস ধরে ইলামবাজার এসে সেখান থেকে বাস বদলে দুবরাজপুর যেতে পারেন।

Google Maps

Scroll to Top