জোড় বাংলা মন্দির

বিষ্ণুপুরের জোড় বাংলা মন্দির, যা কেশব রায় মন্দির নামেও পরিচিত, তার অনন্য স্থাপত্যশৈলী এবং অসাধারণ টেরাকোটার কাজের জন্য বিখ্যাত। এটি মল্লভূমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন।

ইতিহাস ও নির্মাণ

 * প্রতিষ্ঠাতা: মন্দিরটি ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে (৯৬১ মল্লাব্দে) মল্ল রাজা রঘুনাথ সিংহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

 * নামকরণ: মন্দিরে স্থাপিত মূল বিগ্রহ ছিল কেশব রায় (কৃষ্ণের এক রূপ), তাই এটি কেষ্ট রায় মন্দির নামেও পরিচিত। এর স্থাপত্যশৈলীর কারণে একে “জোড় বাংলা মন্দির” বলা হয়, কারণ এটি দুটি “দো-চালা” বা বাংলার কুঁড়েঘরের মতো কাঠামো পাশাপাশি জুড়ে তৈরি করা হয়েছে।

স্থাপত্যশৈলী

জোড় বাংলা মন্দির বাংলার নিজস্ব স্থাপত্যশৈলী “চালা” রীতির একটি অনবদ্য উদাহরণ।

 * গঠন: এটি একটি উঁচু ভিত্তিবেদীর উপর নির্মিত এবং দক্ষিণমুখী। এর ছাদ দুটি দো-চালা কাঠামোর সমন্বয়ে গঠিত, যা মাঝখানে যুক্ত হয়ে একটি একক রূপ নিয়েছে। এর ফলে এটি দেখতে দুটি বাংলার কুঁড়েঘর পাশাপাশি জোড়া লাগানো আছে বলে মনে হয়।

 * উপকরণ: মন্দিরটি পোড়ামাটির ইট দিয়ে তৈরি। এর ভেতরের এবং বাইরের দেয়াল জুড়ে রয়েছে সূক্ষ্ম ও বিস্তারিত টেরাকোটার কারুকার্য।

 * পরিমাপ: মন্দিরের অভ্যন্তরীণ দৈর্ঘ্য প্রায় ১১.৮ মিটার, প্রস্থ ১১.৭ মিটার এবং উচ্চতা ১০.৭ মিটার।

টেরাকোটার কারুকার্য

এই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হলো এর টেরাকোটার ফলক, যা তৎকালীন শিল্পকলা, ধর্ম ও সমাজ জীবনের এক জীবন্ত দলিল।

 * পৌরাণিক কাহিনি: মন্দিরের দেওয়ালে মহাভারত ও রামায়ণের বিভিন্ন দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেমন – ভীষ্মের শরশয্যা, অর্জুনের লক্ষ্যভেদ, কৃষ্ণলীলার বিভিন্ন অংশ (গোষ্ঠলীলা, অসুর বধ, মথুরা যাত্রা), এবং রামায়ণের কাহিনি (রামের জন্ম, হরধনু ভঙ্গ, তারকা বধ)।

 * সামাজিক চিত্র: পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন দিক, যেমন – যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্য, শিকারের চিত্র, এবং নানা ধরনের সামাজিক চিত্রও খোদাই করা হয়েছে।

 * আলংকারিক নকশা: মানব ও দেব-দেবীর মূর্তির পাশাপাশি রয়েছে ফুল, লতাপাতা, জ্যামিতিক নকশা এবং বিভিন্ন প্রাণীর চিত্র।

এই মন্দিরটি বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (ASI) দ্বারা সংরক্ষিত রয়েছে এবং এটি বিষ্ণুপুরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

Google Maps

কিভাবে এখানে আসবেন

সড়কপথে

 * গাড়িতে: কলকাতা থেকে গাড়িতে করে বিষ্ণুপুর যেতে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে, যা সাধারণত ৪ থেকে ৪.৫ ঘন্টা সময় নেয়। প্রধানত SH 2 সড়ক পথ ব্যবহার করা হয়।

 * বাসে: কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুরের উদ্দেশ্যে নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি বাস চলাচল করে। এসপ্ল্যানেড, বাবুঘাট বা করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ড থেকে এই বাসগুলো পাওয়া যায়।

রেলপথে

হাওড়া বা সাঁতরাগাছি থেকে বিষ্ণুপুর (VSU) রেল স্টেশনের জন্য বেশ কিছু ট্রেন আছে। কিছু জনপ্রিয় ট্রেন হলো:

 * রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস (12883)

 * আরণ্যক এক্সপ্রেস (12885)

 * ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস (18627)

যাতায়াতের সঠিক সময়সূচী এবং ভাড়া জানার জন্য আপনি রেলের ওয়েবসাইট অথবা টিকিট বুকিং অ্যাপ দেখতে পারেন।

Scroll to Top