জয়পুর জঙ্গল

বাঁকুড়ার জয়পুর জঙ্গল একটি জনপ্রিয় ভ্রমণস্থান, যা শহর থেকে দূরে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ। নিচে আপনার জন্য একটি বিস্তারিত ভ্রমণ গাইড দেওয়া হলো:

ভ্রমণের সেরা সময়

জয়পুর জঙ্গলে সারা বছরই যাওয়া যায়। তবে আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং পাখি দেখার জন্য দারুণ সুযোগ মেলে। বর্ষাকালেও (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) জঙ্গলের সবুজ রূপ অপরূপ লাগে, তবে এই সময় রাস্তা পিচ্ছিল এবং হাতির আনাগোনা বেশি থাকতে পারে। গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে জুন) এড়িয়ে যাওয়াই ভালো, কারণ এই সময় বাঁকুড়ায় তীব্র গরম পড়ে।

জয়পুর জঙ্গলে কী কী করবেন

জয়পুর জঙ্গল শুধু একটি বনভূমি নয়, এখানে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে:

 * জঙ্গলের ভিতরে ওয়াক এবং সাফারি: জঙ্গলের গভীরতা উপলব্ধি করতে এবং বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও পাখির দেখা পেতে পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে করে জঙ্গল পরিদর্শন করতে পারেন।

 * ওয়াচ টাওয়ার: জঙ্গলের ভিতরে একটি পাঁচ তলা ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, যেখান থেকে পুরো জঙ্গলের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় এখান থেকে দৃশ্য অসাধারণ লাগে।

 * গোকুলচাঁদ মন্দির: জঙ্গলের কাছেই মল্ল রাজাদের আমলে তৈরি প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো পঞ্চরত্ন শৈলীর এই মন্দিরটি টেরাকোটা শিল্পের এক দারুণ উদাহরণ।

 * পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ড: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ডের অবশেষ এখনো জঙ্গলের মধ্যে দেখা যায়, যা ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী।

 * পাখি দেখা: যারা পাখি দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ জায়গা। এখানে ময়ূর, ঝুঁটিয়াল চটক-এর মতো অনেক পাখি দেখা যায়।

কোথায় থাকবেন

জয়পুর জঙ্গলের কাছে এবং বিষ্ণুপুরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো রিসর্ট ও হোটেল রয়েছে:

 * বনলতা রিসর্ট (Banalata Resort): এটি জয়পুর জঙ্গলের সবচেয়ে পরিচিত রিসর্টগুলির মধ্যে একটি। এখানে প্রকৃতি উপভোগের পাশাপাশি সব ধরনের আধুনিক সুবিধা পাওয়া যায়।

 * অরণ্যক ইকো রিসর্ট (Aranyak Eco Resort): এটিও জঙ্গলের কাছাকাছি অবস্থিত এবং যারা প্রকৃতির খুব কাছে থাকতে চান তাদের জন্য উপযুক্ত।

 * হোটেল সোনার বাংলা (Hotel Sonar Bangla): এই রিসর্টটি বিলাসবহুল এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় থাকার অভিজ্ঞতা দেয়।

এছাড়া, বিষ্ণুপুর শহরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিস্ট লজ-সহ আরও অনেক হোটেল আছে।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস ও সতর্কতা

 * হাতির করিডোর: জয়পুর জঙ্গলটি হাতির চলাচলের পথ। তাই সন্ধ্যার পর বা গভীর রাতে একা জঙ্গলে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

 * বনদপ্তরের অনুমতি: জঙ্গলের গভীর অংশে প্রবেশ করতে হলে বনদপ্তরের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।

 * সাথে রাখুন: জঙ্গলে যাওয়ার সময় পর্যাপ্ত জল, হালকা খাবার, পোকামাকড় তাড়ানোর স্প্রে এবং টর্চলাইট সাথে রাখুন।

20250809_015350

কিভাবে এখানে আসবেন

কলকাতা থেকে জয়পুর জঙ্গল পৌঁছানোর দুটি প্রধান উপায় আছে:

 * সড়কপথে: কলকাতা থেকে জয়পুরের দূরত্ব প্রায় ১২৯ কিলোমিটার। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ডানকুনি-আরামবাগ হয়ে সরাসরি জয়পুর পৌঁছানো সবচেয়ে সুবিধাজনক। সময় লাগে প্রায় ৩.৫ থেকে ৪ ঘণ্টা।

 * রেলপথে: নিকটতম রেলস্টেশন হলো বিষ্ণুপুর। হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে বিষ্ণুপুরগামী ট্রেনে যাত্রা করতে পারেন। বিষ্ণুপুর স্টেশন থেকে স্থানীয় গাড়ি বা অটো রিকশা ভাড়া করে জয়পুর জঙ্গল পৌঁছানো যায়, যা প্রায় ১২-১৫ কিলোমিটার দূরে।

Google Maps

Scroll to Top