কাঠগোলা বাগান
মুর্শিদাবাদ জেলার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ঐতিহাসিক স্থান হলো কাঠগোলা বাগান। এই স্থানটি তার সৌন্দর্য, স্থাপত্য এবং ইতিহাসের জন্য পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। এখানে কাঠগোলা বাগান ভ্রমণের একটি বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো।
কাঠগোলা বাগানের ইতিহাস:
* কাঠগোলা বাগানের নামকরণ নিয়ে দুটি ভিন্ন মত প্রচলিত। কেউ বলেন, এখানে কাঠগোলাপের আধিক্য থাকায় এর নাম হয়েছে কাঠগোলা। আবার অনেকে মনে করেন, এই রাস্তার দু’পাশে কাঠের বড় বড় গোলা ছিল, তাই এই নাম হয়েছে।
* এই বাগানটি ১৭৮০ সালে রাজা লক্ষ্মীপৎ সিং দুগর স্থাপন করেন। তিনি ছিলেন জৈন সম্প্রদায়ের একজন ধনী বণিক।
* এই বাগানবাড়িটি প্রায় ২৫০ বিঘা জমির উপর বিস্তৃত।
* একসময় এই বাগানবাড়িতে নিয়মিত জলসা বসত, যেখানে নবাব ও অভিজাতদের আগমন ঘটত। নবাব সৈয়দ হাসান আলী মির্জাও এখানকার নাচমহলে অংশগ্রহণ করতেন।


কাঠগোলা বাগানে কী কী দেখবেন?
* কাঠগোলা প্রাসাদ: এই বাগানের মূল আকর্ষণ হলো চারতলা বিশিষ্ট এই প্রাসাদটি। এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। প্রাসাদের ভেতরে পেইন্টিং, আয়না ও সুন্দর আসবাবপত্র রয়েছে, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। প্রাসাদটি এখন একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে দুগর পরিবারের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং সেই সময়ের শিল্পকর্ম দেখতে পাওয়া যায়।
* আদিনাথ মন্দির: কাঠগোলা বাগানের প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি হলো এই জৈন মন্দিরটি। এটি একটি তিন চূড়া বিশিষ্ট শ্বেতশুভ্র মন্দির, যার গাত্রে বুদ্ধ, মহাবীর, গণেশ সহ বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে।
* গোপন সুরঙ্গপথ: প্রচলিত আছে যে এই বাগানে একটি গোপন সুরঙ্গপথ রয়েছে, যা দর্শকদের কৌতূহল বাড়িয়ে তোলে।
* সাজানো পুকুর: প্রাসাদের সামনে একটি বড় পুকুর আছে, যা বিভিন্ন ধরনের রঙিন মাছের জন্য পরিচিত।
* নহবত গেট: বাগানের প্রবেশমুখে একটি বিশাল এবং সুন্দর স্থাপত্যের নহবত গেট রয়েছে, যা এখানকার একটি বিশেষ আকর্ষণ।
* ভাস্কর্য: বাগানে লক্ষ্মীপৎ, জগপৎ, মহীপৎ এবং ধনপৎ – এই চার ভাইয়ের ঘোড়ায় চড়া মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়।
* সবুজ বাগান: বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে সুন্দর সব বাগান, যেখানে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
ভ্রমণের কিছু টিপস:
* টিকিট: কাঠগোলা বাগানে প্রবেশের জন্য একটি টিকিট কাটতে হয়।
* সময়: মুর্শিদাবাদের অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান যেমন হাজারদুয়ারী, জগৎশেঠের বাড়ি, মতিঝিল ইত্যাদি ঘোরার সাথে কাঠগোলা বাগানও একদিনে ঘুরে দেখা যায়।
* সতর্কতা: ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের সময় এর পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
কাঠগোলা বাগান তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সুন্দর স্থাপত্য এবং শান্ত পরিবেশের জন্য মুর্শিদাবাদে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

Google Maps
কিভাবে এখানে আসবেন
* রেলপথে: মুর্শিদাবাদ রেলওয়ে স্টেশনটি হাওড়া, মুম্বই, চেন্নাই, আহমেদাবাদ এবং ভারতের আরও কয়েকটি শহরের সাথে ভালোভাবে সংযুক্ত। স্টেশন থেকে ট্যাক্সি বা টোটো করে কাঠগোলা বাগানে পৌঁছানো যায়।
* সড়কপথে: মুর্শিদাবাদ শহরের সাথে সড়কপথে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহর এবং কলকাতা থেকে সরাসরি বাস পরিষেবা আছে। কলকাতা থেকে বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে মুর্শিদাবাদ পৌঁছানো যায়।
* আকাশপথে: নিকটতম বিমানবন্দরটি হলো কলকাতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা মুর্শিদাবাদ থেকে প্রায় ১৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে মুর্শিদাবাদ যাওয়া যায়।