কাটরা মসজিদ


মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক এবং আকর্ষণীয় স্থান হলো কাটরা মসজিদ। এটি বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ-এর নির্দেশে ১৭২৪ থেকে ১৭২৬ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে এটি ভ্রমণার্থীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
অবস্থান:
কাটরা মসজিদ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি মুর্শিদাবাদ রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাত্র ২-৩ কিলোমিটার দূরে।
নামকরণ:
“কাটরা” শব্দটি আরবি শব্দ “কাট্রা” থেকে এসেছে, যার অর্থ বাজার বা সরাইখানা। মসজিদটি যেহেতু একটি বাজারের কেন্দ্রে নির্মিত হয়েছিল, তাই এর নাম কাটরা মসজিদ হয়েছে।
স্থাপত্যশৈলী:
কাটরা মসজিদের স্থাপত্যে ইন্দো-ইসলামিক এবং মুঘল স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য মিশ্রণ দেখা যায়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:
* চারটি মিনার: মসজিদের চার কোণে চারটি বিশাল মিনার রয়েছে, যার প্রতিটি প্রায় ৭০ ফুট উঁচু। এই মিনারগুলি দূর থেকে দেখা যায় এবং মসজিদের স্থাপত্যে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
* দুটি তোরণ: মসজিদে প্রবেশের জন্য দুটি বিশাল তোরণ বা প্রবেশদ্বার রয়েছে।
* পাঁচটি গম্বুজ: মসজিদের প্রধান প্রার্থনা হলের উপর পাঁচটি বিশাল গম্বুজ রয়েছে।
* বিশাল আঙিনা: মসজিদটির কেন্দ্রস্থলে একটি বিশাল খোলা আঙিনা রয়েছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে।
* মসজিদের ভেতর: মসজিদের ভেতরে চমৎকার কারুকার্য এবং দেয়ালগুলিতে কুরআন থেকে আয়াত খোদাই করা রয়েছে।
* নবাবের সমাধি: মসজিদের ভিতরে নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ-এর সমাধি রয়েছে, যা একটি বিশেষ আকর্ষণ।
ভ্রমণের বিস্তারিত:
* সময়: কাটরা মসজিদ সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মসজিদে প্রবেশ করতে কোনো টিকিট লাগে না।
* ভ্রমণের সময়: কাটরা মসজিদ ঘোরার জন্য প্রায় ১-২ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝার জন্য একজন স্থানীয় গাইডের সাহায্য নিতে পারেন।
* পোশাক: যেহেতু এটি একটি ধর্মীয় স্থান, তাই ভ্রমণের সময় উপযুক্ত এবং শালীন পোশাক পরা উচিত।

* আশেপাশের আকর্ষণ: কাটরা মসজিদের আশেপাশে আরও অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে, যেমন:
* হাজারদুয়ারী প্রাসাদ
* নিজামত ইমামবাড়া
* মতিঝিল
* খোশবাগ
* নবাবের সমাধি
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
* মসজিদটি মুর্শিদ কুলি খাঁ-এর নির্দেশে নির্মিত হলেও এটি কোনো সময়ে একটি মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
* ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কিন্তু পরে এটি সংস্কার করা হয়।
* এটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে একটি এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত।
কাটরা মসজিদ শুধু একটি স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, এটি বাংলার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ধর্মীয় তাৎপর্য এবং স্থাপত্যশৈলী এটিকে একটি দর্শনীয় স্থান করে তুলেছে।
কিভাবে এখানে আসবেন
* ট্রেন: নিকটতম রেলস্টেশন হলো মুর্শিদাবাদ। সেখান থেকে টোটো, অটো বা রিকশা করে কাটরা মসজিদ পৌঁছানো যায়।
* সড়কপথ: কলকাতা থেকে বাসে করে বহরমপুর পৌঁছানো যায়, সেখান থেকে লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে মুর্শিদাবাদ।