মূর্তি নদী
জলপাইগুড়ি জেলার ডুয়ার্স অঞ্চলের একটি মনোরম নদী হলো মূর্তি নদী। এটি পশ্চিমবঙ্গের সবুজ বন ও চা বাগানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। মূর্তি নদী জলপাইগুড়ি জেলার একটি প্রাকৃতিক রত্ন, যা তার নির্মল সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য এবং শান্ত পরিবেশের জন্য পরিচিত।
উৎস ও গতিপথ
* উৎস: মূর্তি নদীর উৎস হলো নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক।
* প্রবাহ: এটি গোরুমারা ন্যাশনাল পার্কের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। চালসা থেকে মূর্তির দূরত্ব খুব বেশি নয়। নিউ মাল জংশন থেকে মূর্তি নদীর দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। নদীটি সামসিং-এ সমভূমিতে পৌঁছেছে এবং এরপর গোরুমারা বনের অবিচ্ছিন্ন অংশকে বিভক্ত করেছে। এটি জলঢাকা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
* স্বচ্ছ জল: মূর্তি নদীর জল স্ফটিক-স্বচ্ছ, যা পাথর ও নুড়ির উপর দিয়ে বয়ে চলে এক রূপকথার পরিবেশ তৈরি করে। নদীর তলদেশ এতটাই পরিষ্কার যে ডলোমাইট ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
* শান্ত পরিবেশ: ঘন জঙ্গলের নৈঃশব্দ্য এবং নদীর কুলকুল শব্দ মনকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায়। যারা নিরিবিলি বেড়ানোর

জায়গা খুঁজছেন, নদীর ধারে তাঁবুতে ছুটি কাটাতে চান বা পাখি ভালোবাসেন, তাদের জন্য মূর্তি একটি আদর্শ গন্তব্য।
* সূর্যাস্ত: মূর্তির পাড়ে বসে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখা এক পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। গোধূলি বেলায় এই এলাকার প্রাকৃতিক শোভা মন মুগ্ধ করে তোলে।
জীববৈচিত্র্য
মূর্তি নদী গরুমারা জাতীয় উদ্যান এবং চাপড়ামারি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এটি জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল।
* প্রাণী: এই অঞ্চলে লুপ্তপ্রায় একশৃঙ্গ ভারতীয় গণ্ডার, ভারতীয় গৌর, এশীয় হাতি, বন্য বরাহ, সম্বর হরিণ, চিতাবাঘ এবং বাংলা বাঘ দেখা যায়।
* পাখি ও প্রজাপতি: রাজধনেশ এবং আরও বেশ কিছু হিমালয়ের পাখি ও নানাধরনের প্রজাপতির বাস আশেপাশের বনভূমিতে।


বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ার থেকে নানারকম পাখি, ময়ূর, হরিণ বা হাতি দেখা যায়।
পর্যটন আকর্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা
* পর্যটন কেন্দ্র: মূর্তি নিজেই একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের ‘মূর্তি ট্যুরিজম প্রপার্টি’ এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ কটেজ (ইটের ও কাঠের), রেস্তোরাঁ এবং একটি অফ শপ চালু রেখেছে।
* আশেপাশের দর্শনীয় স্থান: মূর্তি থেকে সহজেই সুনতালেখোলা, সামসিং, রকি আইল্যান্ড, বিন্দু এবং ঝালং-এর মতো ডুয়ার্সের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যাওয়া যায়।
* সাফারি: মূর্তি সেতু পার হয়ে গরুমারা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে সাফারি করতে যাওয়া যায়। চাপড়ামারি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যেও ফরেস্ট রাইড বুক করার ব্যবস্থা রয়েছে।
* সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: সন্ধেবেলা রঙিন আদিবাসী নৃত্যের আয়োজন করা হয়।
কিভাবে এখানে আসবেন
* রেলপথে: মূর্তি নদীর সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন হলো নিউ মাল জংশন (প্রায় ১৭ কিমি)। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে মূর্তির দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিমি।
* সড়কপথে: শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে চালসা হয়ে মূর্তি পৌঁছানো যায়। ময়নাগুড়ি থেকে মূর্তি প্রায় ৮ কিমি দূরে।
* আকাশপথে: নিকটতম বিমানবন্দর হলো বাগডোগরা (প্রায় ৬৫ কিমি)।