নলাটেশ্বরী মন্দির সতীপীঠ

নলাটেশ্বরী মন্দির পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার নলহাটিতে অবস্থিত এক বিখ্যাত সতীপীঠ। এটি ৫১ পীঠের অন্যতম এবং ভক্তদের কাছে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

নলাটেশ্বরী মন্দির সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

 * অবস্থান: বীরভূম জেলার নলহাটি শহরের মধ্যভাগে একটি সামান্য উঁচু টিলার উপর এই মন্দিরটি অবস্থিত। নলহাটি স্টেশন থেকে এটি প্রায় মিনিট দশেকের হাঁটা পথে। রামপুরহাট স্টেশন থেকেও সহজে এখানে আসা যায়।

 * পৌরাণিক গুরুত্ব: পুরাণ অনুসারে, সতী দেবী দক্ষযজ্ঞে আত্মাহুতি দেওয়ার পর মহাদেব সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। সেই সময় ভগবান বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ৫১ খণ্ডে বিভক্ত করেন। এই ৫১টি খণ্ড ভারতের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয়, যা শক্তিপীঠ নামে পরিচিত। নলহাটিতে সতীর “নলা” অর্থাৎ কণ্ঠনালী বা সরু কোনো দেহাংশ পড়েছিল বলে মনে করা হয়, যে কারণে এই স্থানের নাম নলহাটি এবং দেবী নলাটেশ্বরী নামে পূজিত হন।

 * ইতিহাস: জনশ্রুতি অনুযায়ী, আনুমানিক পাঁচশো বছর আগে পাইকপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী রামশরণ শর্মা স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের প্রস্তরীভূত দেহাংশটি যেখানে পড়েছিল, সেখানেই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। অষ্টাদশ শতকে নাটোরের জমিদার রানি ভবানী এই টিলার গায়ে বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করান।

* দেবী ও ভৈরব: এই পীঠে দেবী কালিকা নলাটেশ্বরী রূপে পূজিত হন এবং তাঁর ভৈরব হলেন যোগেশ। নলাটেশ্বরী মন্দিরে কোনো প্রতিষ্ঠিত কালী বিগ্রহ নেই, মন্দিরগাত্রেই পাথরে কালীর মুখমণ্ডল বসানো আছে। এই মুখমণ্ডলের নিচে মায়ের কণ্ঠনালী রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়, যেখানে ভক্তরা জল নিবেদন করেন। অবাক করা বিষয় হলো, যত জলই ঢালা হোক না কেন, তা কখনও উপচে পড়ে না বা শুকিয়েও যায় না। জল পান করার মতো শব্দও শোনা যায়।

 * দর্শনের সময়: প্রতিদিন ভোর ৪:৩০টা থেকে বেলা ১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে।

 * পূজা ও উৎসব: নিত্যপূজা ছাড়াও দুর্গাপূজা, কালীপূজা ও সরস্বতীপূজার সময় বিশেষ সমারোহ হয়। সারা বছরই মায়ের অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। কালীপূজা ও দুর্গাপূজার নবমীর দিন বলিপ্রথা চালু আছে।

 * থাকার ব্যবস্থা: নলাটেশ্বরী মন্দিরে থাকার জন্য সদস্য ছাড়া অন্যদের ব্যবস্থা নেই। রামপুরহাট ও সিউড়িতে কিছু হোটেল রয়েছে যেখানে থাকা যেতে পারে। তারাপীঠ থেকে নলাটেশ্বরী প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে।

বিশেষ টিপস:

 * মন্দিরে প্রবেশ করার আগে জুতো খুলে প্রবেশ করতে হয়।

 * মা নলাটেশ্বরীর কণ্ঠে জল নিবেদনের বিশেষ মাহাত্ম্য আছে।

 * দুর্গাপূজা, কালীপূজা বা অন্য কোনো উৎসবের সময় ভিড় বেশি থাকে, তাই সেই সময়ে গেলে থাকার ব্যবস্থা আগে থেকে নিশ্চিত করে রাখা ভালো।

নলাটেশ্বরী মন্দির শুধু একটি তীর্থস্থান নয়, এটি শান্তি ও ভক্তির এক অনন্য স্থান। যারা শক্তিপীঠ দর্শনে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য।

Google Maps

কিভাবে এখানে আসবেন

 * রেলপথে: সবচেয়ে সুবিধাজনক পথ হলো নলহাটি স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনে আসা। নলহাটি স্টেশন থেকে রিকশা বা টোটো করে সহজেই মন্দিরে পৌঁছানো যায়। রামপুরহাট স্টেশন থেকেও গাড়ি ভাড়া করে আসা যেতে পারে।

 * সড়কপথে: বীরভূম জেলার রামপুরহাট, সিউড়ি বা তারাপীঠ থেকে সড়কপথে বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে নলহাটি আসা যায়।

Scroll to Top