পোড়া মাটির হাট
বিষ্ণুপুরের ‘পোড়া মাটির হাট’ একটি বিশেষ আকর্ষণ, যা বিষ্ণুপুরের সমৃদ্ধ টেরাকোটা শিল্পের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এটি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং এই হাটে এসে পর্যটকরা বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মের সাথে পরিচিত হতে পারেন।
অবস্থান এবং সময়:
এই হাটটি বিষ্ণুপুরের জোড় বাংলা মন্দিরের কাছে একটি মাঠে বসে। সাধারণত, এটি প্রতি শনিবার বিকেলে বসে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। তবে শীতকালে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে, তাই এই সময়ে এর ব্যাপ্তি কিছুটা বাড়ানো হয়।
হাটের প্রধান আকর্ষণ:
* টেরাকোটা শিল্প: এই হাটের মূল আকর্ষণ হলো বিভিন্ন ধরনের পোড়ামাটির শিল্পকর্ম। এখানে ছোট থেকে বড়, নানা আকারের টেরাকোটা ঘোড়া, হাতি, বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি, গৃহসজ্জার সামগ্রী, বাসনপত্র, এবং ঐতিহ্যবাহী পুতুল পাওয়া


যায়। বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত ‘বাঁকুড়ার ঘোড়া’ এখানে সহজেই পাওয়া যায়।
* সরাসরি শিল্পীদের সাথে আলাপ: এই হাটে অনেক স্থানীয় শিল্পী তাদের তৈরি জিনিস নিয়ে সরাসরি আসেন। এর ফলে পর্যটকরা তাদের সাথে কথা বলতে পারেন, শিল্পকর্ম তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন, এবং শিল্পীদের কাছ থেকে সরাসরি জিনিস কিনতে পারেন। এতে কোনো মধ্যস্থতাকারী না থাকায় জিনিসের দামও তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
* বাংলার গ্রামীণ পরিবেশ: এই হাটটি একটি গ্রামের হাটের মতোই পরিবেশ তৈরি করে। এখানে কেবল টেরাকোটা নয়, আরও নানা ধরনের হস্তশিল্প, বাঁশের তৈরি জিনিস, এবং হাতে গড়া বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যায়।
* খাবার ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ: হাটে খাবারের দোকানও বসে, যেখানে স্থানীয় মুখরোচক খাবার যেমন – তেলেভাজা, চপ, মোমো, ভেলপুরি ইত্যাদি পাওয়া যায়।
এছাড়া, বিভিন্ন লোকনৃত্য ও লোকসংগীতের দল এই হাটে এসে গান-বাজনার মাধ্যমে এক বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করে। কৃত্তন, রামায়ণ গানের আসর এবং সাঁওতালি নাচের মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও এখানে মাঝে মাঝে দেখা যায়।
* পর্যটনের নতুন মাত্রা: এই হাটটি বিষ্ণুপুর ভ্রমণের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আগে পর্যটকরা শুধু মন্দির দেখেই ফিরে যেতেন, কিন্তু এই হাটের কারণে এখন তারা স্থানীয় সংস্কৃতি ও শিল্পকে আরও কাছ থেকে উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
সব মিলিয়ে, বিষ্ণুপুরের পোড়া মাটির হাট কেবল একটি বাজার নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র যেখানে বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী শিল্প, সংস্কৃতি এবং গ্রামীণ জীবনযাত্রা এক সূত্রে বাঁধা পড়েছে। যারা বিষ্ণুপুরের শিল্পকলা এবং সংস্কৃতিকে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য এই হাটটি একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।

কিভাবে এখানে আসবেন
* গাড়িতে: কলকাতা থেকে গাড়িতে করে বিষ্ণুপুর যেতে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে, যা সাধারণত ৪ থেকে ৪.৫ ঘন্টা সময় নেয়। প্রধানত SH 2 সড়ক পথ ব্যবহার করা হয়।
* বাসে: কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুরের উদ্দেশ্যে নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি বাস চলাচল করে। এসপ্ল্যানেড, বাবুঘাট বা করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ড থেকে এই বাসগুলো পাওয়া যায়।
* রেলপথে: হাওড়া বা সাঁতরাগাছি থেকে বিষ্ণুপুর (VSU) রেল স্টেশনের জন্য বেশ কিছু ট্রেন আছে। কিছু জনপ্রিয় ট্রেন হলো:
* রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস (12883)
* আরণ্যক এক্সপ্রেস (12885)
* ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস (18627)
যাতায়াতের সঠিক সময়সূচী এবং ভাড়া জানার জন্য আপনি রেলের ওয়েবসাইট অথবা টিকিট বুকিং অ্যাপ দেখতে পারেন।