রাজা ভাত খাওয়া
রাজাভাতখাওয়া পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় অবস্থিত একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ শহর, যা বক্সা টাইগার রিজার্ভের ঠিক বাইরে অবস্থিত। এটি তার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত।
রাজাভাতখাওয়ার নামকরণের ইতিহাস:
“রাজাভাতখাওয়া” নামের আক্ষরিক অর্থ হলো “যেখানে রাজা ভাত খেয়েছিলেন”। এই নামের পেছনে একটি আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক গল্প প্রচলিত আছে:
* কোচবিহারের রাজার প্রতিজ্ঞা: জনশ্রুতি অনুসারে, ১৮০০ সালের দিকে কোচবিহারের রাজা ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণ ভুটানের রাজার কাছ থেকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তিনি শপথ নিয়েছিলেন যে, এই অঞ্চল ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ভাত খাবেন না।
* শান্তি চুক্তি ও মহাভোজ: পরবর্তীতে, ভুটানের রাজা শান্তিপূর্ণভাবে এই অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘটনার পর দুই রাজার


মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ মিলন হয় এবং এই ঘন জঙ্গলে তারা একসঙ্গে ভাত খেয়ে উৎসব করেন। এই ঘটনা থেকেই এই স্থানের নাম হয় ‘রাজাভাতখাওয়া’।
* ব্রিটিশদের ভূমিকা: ১৭৭৪ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কোচবিহারের রাজাকে ভুটানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে, কারণ তাদের রেলপথ তৈরির জন্য এই অঞ্চলের কাঠের প্রয়োজন ছিল। রাজার মুক্তির পর তাকে স্বাগত জানাতে এখানে এক মহাভোজের আয়োজন করা হয়, যা এই নামকরণের আরেকটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
রাজাভাতখাওয়ার প্রধান আকর্ষণ:
* বক্সা টাইগার রিজার্ভের প্রবেশদ্বার: রাজাভাতখাওয়া বক্সা টাইগার রিজার্ভে প্রবেশের প্রধান কেন্দ্র। বনের ভিতরে প্রবেশের জন্য সমস্ত অনুমতি এখান থেকেই নিতে হয়।
* প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র: বন্যপ্রাণী সম্পর্কে জানতে এবং চিনতে এখানে একটি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
* অরকিড সংগ্রহশালা: এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডের একটি সংগ্রহশালা রয়েছে।
* রেল কোচ রেস্তোরাঁ: রাজাভাতখাওয়া স্টেশনের ঠিক বাইরে রেলের একটি বাতিল কামরাকে সাজিয়ে একটি আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁ তৈরি করা হয়েছে। এখানে বসে বিভিন্ন ধরনের খাবার উপভোগ করার পাশাপাশি বন্যপ্রাণীর আনাগোনা দেখার সুযোগও রয়েছে।
* বন্যপ্রাণী দর্শন: বন্যপ্রাণী সাফারি, পাখি পর্যবেক্ষণ এবং ট্রেকিং এখানকার প্রধান আকর্ষণ। পর্যটকরা বাঘ, বাইসন, হাতি, হরিণ, ময়ূর এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ পেতে পারেন। এটি ভারত ও ভুটানের মধ্যে হাতি চলাচলের একটি আন্তর্জাতিক করিডোর।
* ওয়াচ টাওয়ার: জঙ্গলের গভীরে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, যেখান থেকে বন্যপ্রাণী দেখা যায়।
কিভাবে এখানে আসবেন
* রেলপথে: রাজাভাতখাওয়া রেলওয়ে স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার-শামুকতলা রোড লাইনের একটি স্টেশন। নিউ আলিপুরদুয়ার জংশন বা আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে বা অটোতে রাজাভাতখাওয়া পৌঁছানো যায়।
* আকাশপথে: নিকটতম বিমানবন্দর হলো বাগডোগরা বিমানবন্দর (শিলিগুড়ি)। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে রাজাভাতখাওয়া পৌঁছানো যায়।
* সড়কপথে: আলিপুরদুয়ার শহর থেকে রাজাভাতখাওয়া প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জাতীয় সড়ক ৩১৭ এই জনপদের উপর দিয়ে নির্মিত।
