রামেশ্বর মন্দির

ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে অবস্থিত রামেশ্বর মন্দির এক প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক স্থান। প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, রামচন্দ্রের ১৪ বছরের বনবাসকালে এখানেই সীতা ও লক্ষণের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং শিব চতুর্দশীর দিনে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ঝাড়গ্রামের একটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

রামেশ্বর মন্দির সম্পর্কে কিছু তথ্য:

 * ঐতিহ্য: এই মন্দিরটি ৪৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো বলে মনে করা হয়। মন্দিরের ভিতরে দ্বাদশ শিবলিঙ্গ এবং একটি পাথরের তৈরি ষাঁড় রয়েছে। মন্দিরের গা ঘেঁষে একটি ৫০০ বছরেরও বেশি পুরোনো কাঁঠাল গাছ আছে, যা স্থানীয়দের কাছে পূজনীয়।

 * স্থাপত্য: মন্দিরটি সাদা পাথর দিয়ে তৈরি। একসময় মন্দিরটি ধবধবে সাদা ছিল, তবে বর্তমানে কালের অভাবে দেওয়ালে কালো ছোপ পড়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণে একটি কুণ্ডপুকুর, একটি ভোগমণ্ডপ এবং একটি নাটমন্দিরও রয়েছে।

 * ধর্মীয় তাৎপর্য: প্রতি বছর শিব চতুর্দশীর সময় এখানে মহা ধুমধাম করে পূজা-অর্চনা এবং মেলা বসে। অনেক ভক্তের বিশ্বাস, এই মন্দিরে মহাদেবের কাছে ভক্তিভরে কিছু চাইলে তা পূরণ হয়।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান:

রামেশ্বর মন্দিরের আশেপাশে আরও কিছু সুন্দর স্থান রয়েছে যা ঘুরে দেখতে পারেন। যেমন:

 * বাল্মীকি তপোবন: রামেশ্বর মন্দির থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বাল্মীকি তপোবন। কথিত আছে, এখানে বাল্মীকি মুনি আশ্রম স্থাপন করেছিলেন এবং এখানেই

রাম-সীতার দুই পুত্র লব-কুশের জন্ম হয়েছিল। এই তপোবনে লব-কুশ মন্দির এবং সীতা কুণ্ড দেখতে পাওয়া যায়। এটি একটি নির্জন ও শান্ত স্থান।

 * ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি: ঝাড়গ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই রাজবাড়িটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান।

 * কুরুম্বেরা দুর্গ: কেসিয়ারী গ্রাম থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্রাচীন দুর্গটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য।

ভ্রমণ টিপস:

 * এই এলাকাটি জঙ্গলে ঘেরা, তাই বিকেল ৪টের পর হাতির আনাগোনা দেখা যায়। তাই নিরাপত্তার কারণে এই সময়টার পরে ভ্রমণ না করাই ভালো।

 * রামেশ্বর মন্দির এবং আশেপাশের স্থানগুলি জনবহুল নয়, তাই নিজের সাথে শুকনো খাবার এবং পানীয় জল রাখা উচিত।

 * ঝাড়গ্রামের আশেপাশের অন্যান্য স্থানগুলি ঘোরার জন্য একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করা সুবিধাজনক।

 * মন্দিরটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।

Google Maps

কিভাবে এখানে আসবেন

 * রেলপথে: সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ট্রেন। কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া করে বা বাসে করে গোপীবল্লভপুর যেতে হবে। গোপীবল্লভপুর থেকে অটো বা অন্য কোনো গাড়িতে করে রামেশ্বর মন্দিরে যাওয়া যায়।

 * সড়কপথে: কলকাতা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গেলে জাতীয় সড়ক ৬ (NH6) ধরে ঝাড়গ্রাম পৌঁছে সেখান থেকে গোপীবল্লভপুর হয়ে রামেশ্বর মন্দিরে যেতে পারেন।

Scroll to Top