তারাপীঠ মহাশ্মশান

তারাপীঠ মহাশ্মশান পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাট শহরের কাছে অবস্থিত একটি অত্যন্ত পবিত্র ও রহস্যময় তীর্থক্ষেত্র। এটি তান্ত্রিক দেবী তারার মন্দির এবং এর সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে, এই স্থানটি ৫১টি সতীপীঠের অন্যতম, যেখানে দেবী সতীর তৃতীয় নয়ন বা নয়নতারা পতিত হয়েছিল।

তারাপীঠ মহাশ্মশানের গুরুত্ব ও রহস্য

তারাপীঠ মহাশ্মশান কেবল একটি শ্মশান নয়, এটি তন্ত্রসাধনার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এর বিশেষ কিছু গুরুত্ব ও রহস্য রয়েছে:

 * শক্তিপীঠ ও সিদ্ধপীঠ: তারাপীঠকে শক্তিপীঠের পাশাপাশি একটি সিদ্ধপীঠ হিসেবেও গণ্য করা হয়। কথিত আছে, এখানে সাধনা করলে সাধক জ্ঞান, আনন্দ এবং অলৌকিক ক্ষমতা (সিদ্ধি) লাভ করেন।

 * বশিষ্ঠ মুনির সাধনা: কিংবদন্তি অনুসারে, ব্রহ্মার মানসপুত্র বশিষ্ঠ মুনি এই মহাশ্মশানের শ্বেত শিমূল গাছের নিচে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে তারামায়ের সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। যদিও সেই শিমূল গাছ এখন আর নেই, পঞ্চমুণ্ডির আসনটি আজও বিদ্যমান বলে বিশ্বাস করা হয়।

* বামাক্ষ্যাপার লীলাভূমি: তারাপীঠের “পাগলা সন্ন্যাসী” বামাক্ষ্যাপা এই মন্দিরে পূজা করতেন এবং মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রে কৈলাসপতি বাবা নামে এক তান্ত্রিকের কাছে তন্ত্রসাধনা করতেন। বামাক্ষ্যাপা তারাদেবীকে নিজের মা হিসেবে দেখতেন এবং তাঁর পূজাতেই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মন্দিরের অদূরেই তাঁর আশ্রম অবস্থিত।

 * তান্ত্রিক রূপ: তন্ত্রে দেবী তারাকে দ্বিতীয় মহাবিদ্যা বলা হয়। তিনি শায়িত শিবের বক্ষে দণ্ডায়মানা। দেবীর বামপদ অগ্রগামী হওয়ায় তিনি ‘বামাকালী’ নামেও পরিচিতা। ঘননীল গাত্রবর্ণের এই দেবী অগ্নিময় শ্মশানে জ্বলন্ত চিতার মধ্য থেকে আবির্ভূতা, যার লোলজিহ্বা, লম্বোদরী, নবযৌবনা এবং মুণ্ডমালিনী রূপ বর্ণিত আছে। দেবীর আসনস্বরূপ জ্বলন্ত চিতা জ্ঞানাগ্নির প্রতীক।

 * দ্বারকা নদী: মহাশ্মশান সংলগ্ন দ্বারকা নদী উত্তরবাহিনী, যা হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই নদীর জলে স্নান করলে মানুষ সিদ্ধিলাভের যোগ্যতা অর্জন করে।

 * রহস্যময় আলো: প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, তারাপীঠের মহাশ্মশানে দেবীর জ্যোতিরূপে বাস করেন এবং তাঁর সঙ্গে থাকেন যোগিনীরা। অনেকেই রাতের অন্ধকারে মিটমিটে আলোর মতো কিছু দেখতে পান, যা দেবীর উপস্থিতি নির্দেশ করে। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, সেই আলোর কাছে যেতে নেই, কারণ তাতে দেবী রুষ্টা হন।

তারাপীঠ মহাশ্মশান একদিকে যেমন জীবন ও মৃত্যুর এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি, তেমনি এটি আধ্যাত্মিক সাধনা ও সিদ্ধিলাভের এক অনন্য স্থান। এখানে প্রতিনিয়ত ভক্ত ও সাধকদের সমাগম হয়, যারা দেবী তারার আশীর্বাদ লাভের আশায় আসেন।

কিভাবে এখানে আসবেন

তারাপীঠ ও এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একই অতএব আপনারা তারাপীঠে এলে এখানে সহজেই আসতে পারবেন।

Google Maps

Scroll to Top