টাইগার হিল

টাইগার হিল (Tiger Hill) পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। এটি মূলত এর মনোরম সূর্যোদয়ের দৃশ্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

অবস্থান ও উচ্চতা

টাইগার হিল দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের উচ্চতম স্টেশন ঘুম শহরের সর্বোচ্চ বিন্দু। এর উচ্চতা প্রায় ২,৫৯০ মিটার (৮,৫০০ ফুট)।

১. সূর্যোদয় দেখা: এটাই টাইগার হিলের মূল আকর্ষণ। খুব ভোরে উঠে (সাধারণত ভোর ৪টার দিকে) টাইগার হিলে পৌঁছানো উচিত যাতে সূর্যোদয়ের সেরা দৃশ্য উপভোগ করা যায়। যখন কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় প্রথম সূর্যের আলো পড়ে এবং সেটি সোনালী বর্ণ ধারণ করে, সেই দৃশ্যটি সত্যিই অসাধারণ। আকাশ পরিষ্কার থাকলে মাউন্ট এভারেস্টও দেখা যায়।

২. কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য উপভোগ: দিনের বেলায়ও টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার চমৎকার প্যানোরামিক দৃশ্য দেখা যায়। মেঘমুক্ত দিনে এর বিশালতা এবং সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

৩. বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘুরে দেখা (সেনচল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি): টাইগার হিল সেনচল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির অন্তর্গত। যারা প্রকৃতি ও

বন্যপ্রাণী ভালোবাসেন, তারা এই অভয়ারণ্যটি ঘুরে দেখতে পারেন। এটি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং কিছু পাহাড়ি প্রাণীর আবাসস্থল।

৪. ফটোগ্রাফি: টাইগার হিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিশেষ করে সূর্যোদয় এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি স্বর্গ। এখানে অসংখ্য ছবি তোলার সুযোগ পাবেন।

৫. আশেপাশে হাঁটাচলা: যদি আপনার সময় থাকে এবং হাঁটতে ভালোবাসেন, তবে টাইগার হিলের আশেপাশে কিছু পাহাড়ি পথে হেঁটে স্থানীয় পরিবেশ ও প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন।

৬. রাত্রিযাপন (নতুন ব্যবস্থা): সম্প্রতি টাইগার হিলে পর্যটকদের জন্য কটেজ ও তাঁবুতে রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর ফলে পর্যটকরা ভোরে উঠে চা বা কফি সহযোগে সূর্যোদয় উপভোগ করতে পারবেন, যা গাড়ির মাধ্যমে এসে দ্রুত ফিরে যাওয়ার চেয়ে আরও বেশি আরামদায়ক হবে।

৭. স্থানীয় খাবার উপভোগ: সূর্যোদয় দেখার পর আশেপাশে কিছু ছোট দোকানে গরম চা, কফি বা ম্যাগি পাওয়া যায়। শীতের সকালে এটি বেশ উপভোগ্য হয়।

৮. টেলিস্কোপে রাতের আকাশ দেখা (যদি থাকে): কিছু ক্ষেত্রে রাতের বেলা টেলিস্কোপের মাধ্যমে রাতের পাহাড় এবং তারার দৃশ্য দেখারও সুযোগ থাকতে পারে, যদি কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা করে থাকেন।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

* সময়: সূর্যোদয় দেখার জন্য খুব ভোরে পৌঁছানো জরুরি। সাধারণত ভোর ৪-৫টার মধ্যে পৌঁছানো উচিত।

* পোশাক: টাইগার হিল বেশ উচ্চতায় অবস্থিত এবং ভোরে প্রচণ্ড ঠান্ডা ও বাতাস থাকে। তাই পর্যাপ্ত গরম পোশাক (জ্যাকেট, মাফলার, গ্লাভস ইত্যাদি) সঙ্গে নিন।

* অনুমতি/কুপন: বর্তমানে যানজট এড়াতে প্রতিদিন সীমিত সংখ্যক গাড়িকে (প্রায় ৩০০টি) পুলিশি অনুমতি কুপন নিয়ে টাইগার হিলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। দার্জিলিং পৌঁছে এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কুপন সংগ্রহ করতে হতে পারে।

* প্লাস্টিক মুক্ত এলাকা: টাইগার হিলকে প্লাস্টিক মুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। তাই কোনো প্লাস্টিকজাত দ্রব্য সঙ্গে নেবেন না বা ফেলে আসবেন না। ড্রপ বক্সের ব্যবস্থা থাকতে পারে।

* প্রবেশ মূল্য: টাইগার হিলে প্রবেশ করতে বর্তমানে মাথাপিছু ৫০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিতে হয়। গাড়ির জন্য পার্কিং ফি এবং অন্যান্য কিছু ফিও থাকতে পারে।

টাইগার হিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে।

কিভাবে এখানে আসবেন

টাইগার হিলে পৌঁছানোর জন্য মূলত দার্জিলিং শহর থেকে যেতে হয়। এখানে পৌঁছানোর কয়েকটি উপায় রয়েছে:

১. জিপ বা ট্যাক্সি: এটি টাইগার হিলে পৌঁছানোর সবচেয়ে সাধারণ এবং সুবিধাজনক উপায়। দার্জিলিং শহর থেকে আপনি একটি জিপ বা ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন। সূর্যোদয় দেখার জন্য খুব ভোরে (সাধারণত ভোর ৩:৩০ থেকে ৪:৩০ এর মধ্যে) যাত্রা শুরু করতে হয়, কারণ ভালো জায়গা পাওয়ার জন্য এবং যানজট এড়াতে আগে পৌঁছানো জরুরি। বর্তমানে, টাইগার হিলে প্রবেশ করতে পুলিশের অনুমতি কুপন প্রয়োজন হতে পারে, তাই ট্যাক্সি চালকের সাথে এই বিষয়ে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিন।

২. পায়ে হেঁটে: যারা ট্রেকিং পছন্দ করেন, তারা দার্জিলিং থেকে চৌরাস্তা, আলুবাড়ি বা জোড়বাংলা হয়ে পাহাড়ি পথ বেয়ে হেঁটেও টাইগার হিলে পৌঁছাতে পারেন। তবে এটি বেশ দীর্ঘ এবং কষ্টসাধ্য হতে পারে, বিশেষ করে ভোরের অন্ধকারে।

৩. নিজের গাড়ি: নিজের গাড়িতে করে টাইগার হিলে যাওয়া সম্ভব, তবে এক্ষেত্রেও পুলিশের অনুমতি কুপন এবং পার্কিং সংক্রান্ত নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। শিলিগুড়ি, দার্জিলিং এবং সিকিম নম্বরের গাড়িগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

* ভোরবেলা যাত্রা: সূর্যোদয় দেখার জন্য অবশ্যই খুব ভোরে যাত্রা শুরু করুন।

* গরম কাপড়: টাইগার হিল বেশ উঁচু এবং ভোরে প্রচণ্ড ঠান্ডা থাকে, তাই পর্যাপ্ত গরম কাপড় সঙ্গে নিন।

* কুপন: ট্যাক্সি বা জিপ ভাড়া করার সময় কুপনের বিষয়টি নিশ্চিত করুন।

* যানজট: পিক সিজনে টাইগার হিলে প্রচুর ভিড় হয় এবং যানজট দেখা দিতে পারে। তাই হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হবেন।

Google Maps

Scroll to Top